
রাজশাহীতে এক নারী চিকিৎসককে বাসা থেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নারী চিকিৎসকের সঙ্গে তার বাবাকেও নেওয়া হয়েছিল। তবে, সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানা এলাকায় তাকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা। পরে স্থানীয় থানা পুলিশ ভুক্তভোগী চিকিৎসকের বাবাকে তার স্বজনদের হাতে হস্তান্তর করেন।
গতকাল সোমবার রাতে এ ঘটনায় মামলা করেছেন ওই নারী চিকিৎসকের বাবা। পুলিশ বলছে, অপহৃত চিকিৎসককে তারা উদ্ধারে কাজ করছে। এরই মধ্যে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত গাড়িটি চিহ্নিত করতে পেরেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে অপহৃত নারীর সাথে অপহরণকারীর সম্পর্ক ছিল। এটির ধারাবাহিকতা রাখতে না চাওয়ার সূত্র ধরেই অপহরণের এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
অপহৃত চিকিৎসক (২৬) রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ থেকে ডেন্টাল বিডিএস শেষ করেছেন। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। সোমবার ভোরে চন্দ্রিমা এলাকার বাসা থেকে বাবা-মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। বাবা-মেয়েকে তুলে নেওয়ার সময় দেয়ালে মাথা ঠুকে দেয়ায় অপহৃত ডাক্তারের মা আহত হন।
তিনি জানান, ভোরে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য তার স্বামী মসজিদে যান। এ সময় তিনি বাইরের ফটকে তালা লাগিয়ে চাবি সঙ্গে নিয়ে যান। তিনি বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর অপহরণকারীরা তার স্বামীকে জিম্মি করে। তারা চাবি নিয়ে এসে বাইরের ফটক খুলে ভেতরে ঢোকে। এ সময় অপহরণকারীরা তাকে ধরে দেয়ালের সঙ্গে মাথা ঠুকে দেয়। তিনি পড়ে গেলে বাবা-মেয়েকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। অপহরণকারীরা চলে যাওয়ার পর খবর পেয়ে আত্মীয়-স্বজনরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
পরে তার বাবাকে সিরাজগঞ্জে রাস্তার পাশে নামিয়ে দিয়ে ওই চিকিৎসককে নিয়ে যায়। সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, সোমবার বেলা ১২টার দিকে সলঙ্গা থানার ভেংড়ি এলাকার লোকজন তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
তিনি জানান, একই মাইক্রোবাসে বাবা ও মেয়েকে অপহরণকারীরা তুলে নিয়ে এসেছিল বলে তারা জেনেছেন। রাজশাহী থেকে আত্মীয়-স্বজনরা গিয়ে বিকেল চারটার দিকে নারী ডাক্তারের বাবাকে পুলিশের কাছ থেকে নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা হন। পরে রাতে রাজশাহীর চন্দ্রিমা থানায় গিয়ে মামলা করেন নারী চিকিৎসকের বাবা।
নগরীর চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান জানান, অপহৃত ও তার পরিবার এবং অপহরণের মূলহোতা হিসেবে যার নাম এসেছে তারা পূর্ব পরিচিত এটা তারা নিশ্চিত হয়েছেন। সোমবার রাতে এই ঘটনায় মামলা হয়েছে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন জানান, এই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। ঘটনাস্থালে সরেজমিনে জোনাল ডিসি গিয়েছিলেন। ওই চিকিৎসকের বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশের দিক থেকে ওই চিকিৎসককে উদ্ধারের সব ধরনের তৎপরতা চালানো হচ্ছে। পুলিশ অপহরণের কাজে ব্যবহৃত গাড়িটির নম্বর শনাক্ত করতে পেরেছে। এই নম্বর বিভিন্ন থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। গাড়িটি ধারার বিষয়ে চেষ্টা চলছে।
কী কারণে অপরণ করতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্তে যতটুকু পাচ্ছি যে, এই নারী চিকিৎসকের সাথে অপরহণকারীর মূল যিনি তার সাথে সম্পর্ক ছিল। অভিযুক্ত অপহরণকারী প্রতারক টাইপের লোক। ভুয়া পরিচয় দিয়ে সম্পর্ক গড়েছিল। এটা বুঝতে পেরে সেই সম্পর্ক থেকে ওই নারী বের হয়ে আসতে চেয়েছিলেন। তখনই এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে পুলিশের তদন্তে ওঠে এসেছে।