7.9 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

সন্তান বুকে নিয়ে আদালতে তরুণী

সন্তান বুকে নিয়ে আদালতে তরুণী
সন্তান কোলে মিম আক্তার

এক মাসের অবকাশকালীন ছুটি শেষ হয়েছে। নতুন বছরের প্রথম দিনে গতকাল বুধবার ঢাকার নিম্ন আদালত চত্বর চিরচেনা রূপে ফিরেছে। অনেক আইনজীবী নতুন পোশাকে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছেন। একে অন্যকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

এত কিছুর মধ্যেও নতুন বছরের কোনো প্রভাব পড়েনি হতভাগ্য তরুণীর জীবনে। যে স্বপ্ন নিয়ে ঘর বেঁধেছিলেন, সেই ঘর ছাড়তে হয়েছে তাঁকে। কোলজুড়ে এসেছে ছেলেসন্তান। চার মাস বয়সী সন্তান নিয়েই স্বামীর বিচার চেয়ে আদালতে এসেছেন তিনি।

- Advertisement -

হতভাগি তরুণীর নাম মিম আক্তার। পাবনার সুজানগরে তাঁর গ্রামের বাড়ি। বর্তমানে তিনি নিজের সন্তান ওয়ালিদ আল মুনতাসীর সায়াদ এবং মা আঞ্জুমান আরা পলিকে নিয়ে বসবাস করছেন। গত বছরের ২৬ জুন নির্যাতনের ঘটনায় ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৯-এ ভুক্তভোগী মিম আক্তার বাদী হয়ে স্বামী আশরাফুল ইসলাম আকিবসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় তদন্ত শেষে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ। এ মামলার খোঁজ নিতেই গতকাল মিম এবং তাঁর মা আদালতে আসেন।

নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই মিম আকিবকে চিনতেন। তবে তাঁদের মধ্যে কোনো কথাবার্তা হতো না। পরে মিম নিজের পরিবারের আর্থিক কষ্ট লাঘবে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করেন।

২০২৩ সালের জুনে আকিবের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে ওই বছরের জুলাই মাসে তাঁর মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন রাজধানীর দক্ষিণ খান এলাকার ভাড়াটিয়া আশরাফুল ইসলাম আকিব তাঁর মায়ের চিকিৎসায় নানাভাবে সহযোগিতা করেন। এতে আকিবের প্রতি তাঁদের বিশ্বাস জন্মে। এই সরলতার সুযোগে আকিব তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই মাত্র তিন হাজার টাকা কাবিননামায় উত্তরা কাজী অফিসে তাঁরা বিয়ে করেন। পরে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা হলে তাঁর স্বামী আকিব সন্তান নষ্ট করে ফেলতে চাপ দেন। তা না হলে বিদেশে যাওয়ার জন্য তাঁকে টাকা দিতে হবে। নিরুপায় হয়ে টেইলার্সের দোকানের জামানত হিসেবে থাকা পাঁচ লাখ টাকা তুলে তাঁকে দেওয়া হয়। পরে জমি কেনার জন্য ফের টাকা চেয়ে চাপ দিতে থাকেন আকিব। কিন্তু টাকা না দেওয়ায় তাঁকে শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করা হয়। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বার সময় মারধর করলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে মিম স্বামীর বাড়িতে যান। কিন্তু সেই পরিবার তাঁকে ভালো খাবার দিত না। প্রচণ্ড গরমে ফ্যান ছাড়া ঘরে থাকতে হতো। এতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ৯ মাসের সময় মিম মায়ের বাড়িতে চলে যান। এর পর থেকে তাঁর স্বামী কোনো যোগাযোগ রাখেননি। এই অবস্থায় তাঁর মায়ের বাড়িতে গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর ছেলেসন্তান জন্ম দেন মিম। সন্তান জন্মের ২৩ দিন পর তাঁকে ডিভোর্স পেপার পাঠান তাঁর স্বামী। বর্তমানে মিম অনার্সে পড়েন।

ভুক্তভোগী মিম আক্তার বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিং করতে গিয়ে আকিবের সঙ্গে আমার পরিচয়। আমার আম্মু অসুস্থ হয়ে পড়লে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন সে আমাদের পাশে ছিল। পরে তার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। কিন্তু সে আশরাফুল ইসলাম আকিবের পরিবর্তে আকিব ইসলাম পরিচয়ে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকেই নির্যাতন শুরু হয়। আমার সন্তান হলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত আকিব কখনো খোঁজ নেয়নি। সে কোথায় আছে সেটাও জানি না। নিজের সন্তান নিয়েই আছি। আমি তার বিচার চাই।’

তরুণীর মা আঞ্জুমান আরা পলি বলেন, ‘সেলাই মেশিন ছিল। পাঁচ লাখ টাকা জামানত দিয়ে টেইলার্সের দোকান ভাড়া নিয়েছিলাম। কিন্তু জামাই সেলাই মেশিন বিক্রি করে আমাকে গ্রামে পাঠিয়ে দেয়। দোকানের জামানতের টাকাও নিয়ে নেয়। তখন বলে খরচ হিসেবে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে দেবে। তবে কখনোই কোনো টাকা দেয়নি। অনেক ভালো জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসত। কিন্তু ওই সব জায়গায় বিয়ে দেইনি। তাকে বিশ্বাস করে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলাম। এখন আমরা খুব অশান্তিতে আছি। এই ছোট বাচ্চা নিয়ে পথে পথে ঘুরছি। আল্লাহ অবশ্যই বিচার করবেন।’

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles