
তাঁর কথায় যেন বাঘে-মহিষে এক ঘাটে পানি খেত। তিনি যা বলতেন সেটাই ছিল নিয়ম। তার নিয়মেই চলত ফরিদপুরের প্রশাসন থেকে শুরু করে আমজনতা। তিনি ছিলেন ফরিদপুরের দন্ডমুন্ডের কর্তা। তার কথার দ্বিমত করার সাহস ছিল না কারও। সত্য-মিথ্যা যাই হোক না কেন- তিনি যা বলতেন তাই ছিল নিয়ম ও আইন। তিনি হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই, ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের সাবেক এমপি, একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সময়ের আবর্তনে এক সময়ের ভয়ংকর বাঘ হিসেবে পরিচিত হওয়া মোশাররফ হোসেন এখন কাগুজে বাঘ। তার কথা কেউ আর মনেও রাখেনি। এক বুক হতাশা নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েই দেশান্তরী হন। চলে যান মেয়ের কাছে সুইজারল্যান্ডে। বর্তমানে সেখনেই একাকিত্ব জীবন কাটছে তার।
ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন মাত্র ১০ বছরে প্রভাব-প্রতিপত্তি আর ক্ষমতা খাটিয়ে গড়ে তুলেছিলেন অঢেল সম্পদ। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেন তিনি। তার অনুসারীরা দুর্নীতি আর লুটপাটের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারে অভিযুক্ত। বহুল আলোচিত ২ হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় তাদের অনেকেই এখনো জেলে। মোশাররফ জামানায় গড়ে ওঠা ‘হেলমেট ও হাতুড়ি বাহিনী’র সদস্যরা এখন শহর থেকে বিতাড়িত।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশের মতে, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই মোশাররফের উত্থান শুরু হয় ভয়ংকর রূপে। এমপি-মন্ত্রীর ক্ষমতা হাতে পেয়েই বদলে যেতে থাকেন। শুরু হয় ক্ষমতার দাপট আর নানা শৌখিনতার। বাড়ি-গাড়ি, জমি, সম্পদ গড়ায় নজর দেন। পাশাপাশি জৌলুসময় জীবন যাপন শুরু করেন। এর মধ্যে বাড়িবিলাস নেশায় পেয়ে বসে তাকে। ফরিদপুর শহর ও পদ্মার চরে গড়ে তোলেন আধুনিক সুবিধাসংবলিত বাংলো টাইপের তিনটি জৌলুসপূর্ণ বাড়ি। যার বাজারমূল্য শত কোটি টাকারও বেশি।
ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য হন। প্রথমে শ্রমমন্ত্রী, পরেরবার প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী এবং সর্বশেষ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আর ২০১৮ সালের রাতের ভোটেও এমপি হন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের বদরপুর, কমলাপুর ও ডিক্রিরচর ইউনিয়নে সরকারি খাস ও ব্যক্তি মালিকানার একের পর এক জায়গা-জমি দখল করে বিলাসবহুল আর নয়নাভিরাম তিনটি বাড়ি ছাড়াও খন্দকার মোশাররফের রয়েছে পৈতৃক ভিটার আরও দুটি বাড়ি। এ ছাড়া ঢাকার গুলশানেও তার বাড়ি রয়েছে। এই বিপুল অর্থবৈভব আর প্রতিপত্তির মাঝেই দুর্নীতি আর দখলবাজির কেলেঙ্কারিতে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন।
শহরের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের বদরপুরে খন্দকার মোশাররফ তৈরি করেছেন ‘আফসানা মঞ্জিল’ নামে বিলাসবহুল বাড়ি।