-5 C
Toronto
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫

প্লট কাহিনী ও ইলিশ হোটেল

প্লট কাহিনী ও ইলিশ হোটেল
প্লট কাহিনী ও ইলিশ হোটেল

দেশের জন্যে ‘অসামান্য অবদান’ রাখায় ‘অনুগত ও তোষামোদকারী’ সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আমলা, সাংবাদিক, শিল্পীদের ৮৩০ প্লট দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল, বিকল্প ধারা এমনকি বিএনপির সাবেক দু’জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। প্লট পেয়েছেন তিনশত কোটি টাকার ঋণ খেলাফী, সচিব, মন্ত্রী এমপিদের ছেলে মেয়ে সহ অনেকে। কেউ কেউ দাবী করেছেন সংবিধানের ১৩/এ ধারা মোতাবেক তারা আবেদন করে সরকারী এসব মুল্যবান প্লট পেয়েছেন। এসব প্লট অবশ্য আগের সব সরকারও দিয়েছেন তবে এত ব্যপকভাবে নয়।

প্রশ্ন হলো প্লট প্রাপ্তরা দেশের জন্যে কী অসামান্য অবদান রেখেছেন তা দেশবাসীর জানা দরকার। আর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো আমেরিকা কানাডাসহ পৃথিবীর গনতান্ত্রিক দেশগুলোতে এরকম কোন গুলশান, বনানী, উত্তরা, পূর্বাচল, ঝিলমিল নামক সরকারী প্লট আছে কিনা যা রাজউক নামক সরকারী কোন প্রতিষ্ঠান দিতে পারে? উত্তর হলো নেই। এসব দেশের এমপিদের একমাত্র কাজ আইন প্রণয়ন করা। দলবাজী, মিছিল মিটিং করে দল বা সরকার প্রধানকে তুষ্ট রাখার জন্যে কেউ চেষ্টা করে না। সে কারণেই কোন তোষামদকারী সাংবাদিক গড়ে উঠার সুযোগ নেই। সে কারণেই দশ বছর ট্রুডোর নিজ দলের বিশ্বস্ত সব এমপিরা কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাষ্টিন ট্রুডোকে নিঃসংকোচে ‘পদত্যাগ করুন না হলে অনাস্হা দিব’ বলতে সাহস পায়। এসব দেশে সব জায়গাই গুলশান বনানী। যেসব জায়গার আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ভাল না, সেখানে ধনীরা বাড়ী কিনেন না। নিজেরা নিজেদের পছন্দমত জায়গায় চলে যান। সবই জনগণের ইচ্ছেমত। সরকার কোন জায়গাকে কথিত উত্তরা, গুলশান বনানী ঘোষণা দিয়ে প্লট বরাদ্দ করেন না।

- Advertisement -

প্লট কাহিনী ও ইলিশ হোটেল

এইসব অকাম যা মুলত দুর্নীতিকে উৎসবে পরিণত করেছে তা বাংলাদেশে দরকার হয় কেন? কারণ এমপিদের হাতে তথাকথিত উন্নয়নের চাবি তুলে দেয়ার ব্যবস্হা রাখা। এমপি খুশী মানে সরকারের টিকে থাকা। ছলে বলে কৌশলে সেজন্যে এমপি বানাতে হয়, এমপি হাতে রাখতে হয়। পুলিশ হাতে রাখতে হয়, আমলা, সাংবাদিক  হাতে রাখতে হয়।

বর্তমানে দেশে যা চলছে তা আগের থেকে উত্তোরণের কোন আলামত এখন পর্যন্ত দেখছি না। যত সংস্কার প্রস্তাবই দেয়া হোক না কেন, এমপিদের হাতে রাস্তা ঘাট, ব্রিজ কালভার্ট উন্নয়ন করার সুযোগ রাখা, ডিও লেটার দেবার সুযোগ রাখা রহিত করা না গেলে নির্বাচন সুস্ঠ হবে না। অবৈধ টাকার খেলার নির্বাচন বহাল থাকবে, জবাবদিহিতা তৈরী হবে না। ফলে যেই লাউ সেই কদুই বহাল থাকবে এ বিষয়ে চ্যালেন্জ করে বলতে আমার কোন দ্বিধা নেই।

শুনেছি অনেকেই রাতে মাওয়া ঘাটে যায় শুধু ইলিশ খেতে। ইলিশের দেশের মানুষ আমি, ছোট বেলা থেকে পদ্মার ইলিশ সহ অন্যান্য যাবতীয় নামকরা মাছ খেয়ে বড় হয়েছি, তবুও মাওয়া ঘাটে যাবার একটা ইচ্ছা ছিল। সেখানে অনেক বন্ধু ও পরিচিত মহল আছেন, গেলে তাদের সাথে দেখা না করলে উপায় নাই। প্রতিবারই ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে বাড়ী যেতে যেতে ভাবি একবার মাওয়া ঘাটে স্টপ ওভার করলে কেমন হয়! সময় হয় নি। তবে গত শুক্রবার বাড়ী থেকে ঢাকা আসার পথে ড্রাইভারকে বললাম, রাস্তায় পাশে জুম্মার নামাজ পড়বো। ড্রাইভ করতে থাকুন, নামাজের সময় হলে যে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে যাবেন। তিনি সোজা মাওয়া ঘাটের পাশে দক্ষিন কুমারভোগ মসজিদে নিয়ে গাড়ী দাঁড় করলেন। সেখানে নামাজ শেষে জিজ্ঞেস করলেন, পাশেই রেষ্টুরেন্ট, খাইবেন নি? মুলত ড্রাইভারের ইচ্ছে পূরণ করতেই সেখানে গেলাম। সাঁড়ি সাঁড়ি অনেক রেস্তোরা। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন দেখে একটাতে ঢুকে কিছু খেয়ে নিলাম। দাম অনেক বেশী। এক টুকরো গরুর মাংশ কেটে ছোট ছোট তিন টুকরা মাংশ ও এক টুকরো হাড্ডি দিয়ে দাম নিল তিনশত টাকা। ইলিশ মাছের দুই টুকরো ভাজা ছয়শত টাকা। কাঁচা মাছ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করছিলো আমাদের পছন্দ করা মাছ ভেজে দিবে। সেসব করার সময় ছিল না। মাওয়া ঘাটের আশে পাশের বন্ধুদের সাথে ভবিষ্যতে একদিন দেখা করার ইচ্ছে পোষণ করে চুপি চুপি এই হলো আমার প্রথম মাওয়া দর্শনের কাহিনী।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles