![গুডবাই কানাডা, আমার নিজের দেশই ভালো! গুডবাই কানাডা, আমার নিজের দেশই ভালো!](https://www.thebengalitimes.com/wp-content/uploads/2025/01/Picture12-3.jpg)
আমি একজন মেয়েকে চিনি বেশ ভালো ঘনিষ্ঠ বলা যায়। মেয়েটা ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ভিসায় এসেছিল ইন্ডিয়া থেকে। তারপর সে কানাডার টরন্টোতে একটা কলেজে Early childhood education বিষয়ে ডিপ্লোমা করেছে। সে এসেছিল ২০১৯ সালের দিকে।
পড়া শেষ করে সে তিন বছরের ওয়ার্ক পারমিট পায়। সে সময় আন্ডার গ্রাজুয়েটদের ওয়ার্ক পারমিটে তেমন সমস্যা ছিল না। তবে এখন হবে। যারা ফিল্ড অফ স্টাডিতে থাকবে না তারা ওয়ার্ক পারমিট পাবে না এখনকার নিয়ম অনুযায়ী।
যাই হোক, তারপর সে খুব ভালো কোম্পানিতে চাকরি পায় ও এখনো করছি। তার খুব বেশিদিনের অভিজ্ঞতা না থাকলেও সে বেতন পাচ্ছে ভালোই। ঘণ্টায় প্রায় $29 cad করে পায়।
সে এক বছর কাজ করার পর তো সে তার প্রোফাইল express entry পুলে সাবমিট করেছে। যখন পয়েন্টস ডাউনে যাবে তখন সে PR এর আবেদন করার জন্য ইনভাইটেশন পাবে।
কিন্তু বিধিবাম। প্রতিকূল ভাগ্যের কারণে পয়েন্টস তো কমছেই না। এদিকে তার ওয়ার্ক পারমিট শেষ হবে এই আসছে জুনে।
তার সঙ্গে গতকালকে কথা হলো অনেকক্ষণ। আমি জানতে চাইলাম কী অবস্থা? সে জানাল কোনো সাড়া পায় নি সে এখনো। পয়েন্টস অনেক হাই। সে বলল, “যদি এই কয় মাসের মধ্যে PR এর জন্য আবেদন করার কোনো সাড়া বা ইনভাইটেশন না পাই, আর ওয়ার্ক পারমিট শেষ হয়ে যায় আমি এখানে আর কাজ করতে পারব না”। তারমানে তাকে কাজ ছেড়ে দিতে হবে।
আমি খুবই মর্মহত হলাম। জানতে চাইলাম আর কোনো অপশন তার জন্য আছে কিনা। সে বলল, সে ভিজিট ভিসায় থাকতে পারবে ছয়মাসের মতো। আর লিগ্যালি কোনো কাজের অপশন থাকবে না।
আমি ব্যথিত হলাম। মনে হচ্ছিল আমি কিছু করলে যদি কারোর উপকার হতো তাহলে করতাম। যেমন, গতকাল আমার পরিচিত একজন আমার কাছ থেকে একটা ডকুমেন্ট নিয়েছে তার PR এর জন্য অত্যন্ত জরুরি সেটা। তবে সবার জন্য সেটা প্রযোজ্য না। মিলবে না। কিন্তু যাকে দিয়েছি তার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমি নাও করে দিতে পারতাম। কিন্তু আমি চেয়েছি যে যেভাবে হোক থেকে যাক। তাই গতরাতে সে আমার বাসায় ডকুমেন্টটা নিতে আসলে -30° সেলসিয়াসের মধ্যে বাইরে গিয়ে তাকে দিয়ে আসি। সে খুবই কৃতজ্ঞ হলো। সবকিছুতেই আল্লাহ ভরসা।
তো যে মেয়েটার কথা বলছিলাম তাকে জিজ্ঞেস করলাম তাহলে তোমার পরিকল্পনা কী? তার মনের গভীরে একটা প্রচণ্ড আঘাতের ব্যথায় সে কাতর মনে হয়েছে আমার কাছে। বলল, জানি না। আমি বললাম, কোনো কিছু জানি না বলে হাল ছেড়ে দিও না। এখন ঠিক করে রাখ ছয়মাস পরের সিদ্ধান্ত।
সে বলল, সে দেশে চলে যাবে। ইন্ডিয়ায়। পৃথিবীর আর কোনো দেশে সে যাবে না। তার ভাইবোন ইউকে’তে আছে। আমি বললাম, সেখানে গিয়ে ইউনাইটেড হও। সে নারাজ। সে বলল, ইউকে বসবাসের জন্য খুবই টাফ। কানাডার মতো এতটা উদার না। হেল্থ ইনসুরেন্স অন্যান্য অনেক কিছুই সেখানে সুবিধা নেই। যা কানাডায় আছে। তার কাছে বসবাসের জন্য কানাডা ভালো।
তবে সে তার মতামত জানাল, কানাডা এখন আগের মতো এতটা ভালো নেই। তারচেয়ে তার নিজের দেশ অনেক ভালো। কিছুটা অভিমানের সুরেই বলল সে, কয়েক বছর পরে কানাডা আরো খারাপ হবে। সাফার করবে। আর ইন্ডিয়া অনেক উপরে উঠে যাবে। এখনই অনেক উপরে। তখন সারা বিশ্ব থেকে ইন্ডিয়াতেই যাবে ইমিগ্রেশন নিতে, কিন্তু ইন্ডিয়ার সরকার নেবে না।
জানি তার তরফ থেকে কথাগুলো সত্য। তবে অনেকটাই আবেগ ও দুঃখ মিশ্রিত হয়েই সে এসব বলেছে।
চিন্তা করতে পারেন! সে বলল, তার কোর্সের টিউশন ফি বাবদই শুধু লেগেছে $50K এর মতো। তারপর থাকা-খাওয়া ও অন্যান্য খরচের হিসেব তো আলাদা। তারপর কতোটা কষ্ট করতে হয়েছে পথ চলতে। স্ট্রেস হয়েছে দিগন্ত ছোঁয়া। সব সামলে নিয়েছে সামনে একটা স্বপ্নীল দিনের অপেক্ষায়। আজ যা হতাশায় আচ্ছাদিত।
যারা আন্ডার গ্রাজুয়েটের স্টুডেন্ট আপাতত তাদের এসব সমস্যা। মাস্টার্স বা ডক্টরেটদের তেমন সমস্যা হবে না আশা করা হচ্ছে।
আমার পরামর্শ হলো skilled trade ছাড়া কোনো কিছুই আন্ডার গ্রাজুয়েটদের জন্য কাজ দেবে না। শুধু এ ক্যাটাগরির স্টুডেন্টরাই না। Skilled trade সবার জন্য পথ সহজ করবে।
আজ থেকে বছরখানিক আগে আমি এই পরামর্শ দিয়েছিলাম একটা লেখা। তখন একজন ফলোয়ার আপা খুবই মশকরা করে কমেন্টে লিখেছিলেন, “আমাদের ছেলেমেয়েদের এত কষ্ট করে, টাকা খরচ করে কানাডায় পড়িয়ে এসব কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছেন?”
পরামর্শ যে কেউ দিতে পারে। পরামর্শ গ্রহণ করার দায়িত্ব সম্পূর্ণ আপনার নিজের হাতে। এখন দেখেন ঐ পরামর্শের মূল্য কতো!
এ বছরের শেষে অসংখ্য আন্ডার গ্রাজুয়েটদের ওয়ার্ক পারমিট শেষ হবে আর বাড়ি ফিরে যেতে হবে PR না নিয়েই। যদি তারা skilled trade এ পড়ত ও কাজ করত তাহলে সব সহজ হতো। কানাডা এখন দক্ষ মানুষ চায়।
তাই আগামীতে যারা আসবেন হয় মাস্টার্স করতে আসবেন, নাহলে skilled trade বিষয়ে পড়তে আসবেন। কাজও সেটা নিয়ে করবেন। PR পাবেন, ইনকামও ভালো হবে।
আল্লাহ আপনাদের সুস্থ রাখুন।
টরন্টো, কানাডা