পাঁজা কোলে করে ড্রইং রোমের সোফায় আধ শোয়া করে বসিয়ে দিল তারা কে। ইয়াদ কয়েক বার জোড়ে নিঃশ্বাস নিয়ে বললো দেখতে তো পাঠকাঠির মতো লিকলিকে ভাড়ি তো কম না।
তারার ফর্সা গাল লাল টুকটুকে হয়ে গেছে। নিজেকে সামলে নিয়ে বললো –
–মা তো বলে আমি সারাদিন কিছু খাই না।
–কিছু খাও না। তবে আসো ভালোবাসা খাওয়াই।
বলেই ইয়াদ জাপটে ধরলো তারা কে। ইয়াদের বুকের উম খারাপ লাগছে না,কিন্তু বুকে ভিতর টা কেমন জানি হিম হয়ে আসছ। ছুটে যাওয়ার মতো কোন বাহানা বানাতে ও মনচাইছে না।
পুড়া গন্ধে তাদের মোহ কাটলো।
–ইয়াদ ডিম পুড়ে গেছে ছাড়ো, ছাড়ো।
–তারা তোমার কিছু না কিছু বাহানা তৈরি করতেই হবে। সব ইচ্ছাকৃত।
–রাগ করো না,প্লিজ। বেশি সময় লাগবে না জাস্ট ওয়ান মিনিট বাবু।
ডিম ভুনা খাওয়ার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। তাও খিচুড়ি টা যদি নিজের স্বাদ বজায় রেখে সম্মান বাঁচায়। দুই প্লেটে খিচুড়ি,মায়ের হাতের রান্না করার আগের রাতের খাসির কলিজা ভুনা সাথে আমের আচার টা নিয়ে ইয়াদের কাছে বসতে বসতে বললো-
–নিজের হাতে খাবে নাকি আমি খাইয়ে দিব?
–ওফ,এখন কি এসবের সময়? আশ্চর্য রকমের মেয়ে মানুষ তুমি।
তারার চোখ গড়িয়ে পানি পরতে লাগলো। অস্পষ্ট উচ্চারণে বললো-
–তুমি কি সত্যি আমাকে ভালোবাসো? যদি ভালো না বাসো তবে বলে দাও। তবে আমি তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি ইয়াদ।
তারার হাত থেকে একটা প্লেট নিয়ে খেতে খেতে বললো-
–কান্নাকাটি পরে ও করা যাবে। দ্রুত খাও।
–আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
–কি প্রশ্ন?
–তুমি কি আমাকে ভালোবাস?
–ভালো না বাসলে এমন সময় তোমার বাসায় চলে এসেছি তোমাকে আদর করতে।
তারার মোবাইল টা বেজে উঠলো। আবিরের নাম্বার থেকে কল এসেছে।
ইয়াদ একরাশ বিরক্তি নিয়ে চোখ ইশারায় বলল ফোন রিসিভ করো।
–হ্যালো বাবা।
–তারা তুমি কি করছো?
–না, তেমন কিছু না। একটু রান্না করার চেষ্টা করছি।
–শোন আমরা চলে আসছি । তোমার জন্য বাহির বাহির থেকে নিয়ে আসবো। তোমার কি খেতে ইচ্ছে করছে?
– একটা কিছু হলেই হবে,বাবা।
–তোমার মায়ের সাথে কথা বলবে?
–না,সমস্যা নেই। রেখে দাও বাবা।
তারা ফোনের লাইন কেটে ভীত কন্ঠে বললো-
–বাবা-মা চলে আসছে।
– বিলাই মুখীর জন্য কিচ্ছু করতে পারলাম না।
বলে একটা সিগারেট ধরালো ইয়াদ।
–বিলাই মুখী বললে কেনো?
–নিজের চোখ দেখেছো আয়নায়?
–হুম রোজ দেখি। মা বলে আমার নারকেলের মতো চোখের মণি। এমন চোখে কাজল পরলে খুব সুন্দর দেখায়।
আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড মানে প্রেমিকা। তুমি আমাকে সুন্দর কোন নামে ডাকতে পারতে। ইয়াদ আমি কেন বুঝতে পারি না,তুমি আমাকে ভালোবাস।
–কি এমন মহাভারত রচনা করলে, তুমি বুঝতে পারবে তোমাকে ভালোবাসি? সারাক্ষণ আমি তারা কে ভালোবাসি, আমি তারা কে ভালোবাসি জপ করতে হবে?
– এই যে তুমি আমাকে সুন্দর কোন উপমা দাও না। আমাদের সম্পর্ক কোথায় গিয়ে মিলবে সেই গল্প করো না। আমার পরিবারের কোন গল্প শুনতে চাও না। তোমার পরিবারের কারো সাথে কথা বলাও না। তাদের গল্প বলো না।
– ও আচ্ছা, আমার মহারাণীর মনে তবে এই দুঃখ।
তারা ইয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বুঝতে পারছে না এই কথা টা সে ঠিক কি ভাবে বলেছে।
তারা কিছু বলার আগেই ইয়াদ তারার মুখের দিকে সিগারেটের ধোঁয়া ছুড়ে দিতে দিতে বললো-
–আচ্ছা তোমার ইন্সটাগ্রামে প্রোফাইল পিক টা কোন ইভেন্টের ছিল?
–একটা পারিবারিক।
–বুঝতে পারলাম না ঠিক। কারো সুন্নতে খাৎনা,নাকি বার্থডে, নাকি বিয়ে।
–বিয়ে।
–কার বিয়ে ছিল, তারা?
এই প্রশ্ন গুলো শুনে বিচলিত হয়ে গেছে। ইয়াদ আসলে কি বলতে চাচ্ছে।
–মায়ের বিয়ে।
–হুম মায়ের বিয়ে! তোমার মায়ের বিয়ে?
–হুম,তুমি আমার সম্পর্কে তো জানো। তবে কেন এইসব প্রশ্ন করছো।
–তোমার সম্পর্কে জানি ঠিক আছে। তোমার মায়ের বিয়ে একা একা খেয়েছো দাওয়াত টা পর্যন্ত দাও নাই।
–ইয়াদ,কথা গুলো স্বাভাবিক ভাবে কিন্তু বলতে ও তো পারো।
–আচ্ছা তারা এতো দিন হলো প্রেম করছি আমরা। তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য আমার ছটফটানি কি তুমি দেখো না। কই তুমি তো কখনো সাড়া দাও না। দূরে ঠেলে রাখো। আমি কি কখনো বলেছি, তুমি আমাকে ভালোবাস না।
নিজের পাতানো বাপ কে তো ঠিক ই দিচ্ছ। রাতে দিচ্ছে মা, ফাঁকফোঁকড়ে মজা দিচ্ছে মেয়ে। আমি চাইলে-ই, না।
তারা এইসব শুনে তারা আকাশ থেকে পরলো। তারা চিৎকার করে উঠলো-
–ইয়াদ,এনাফ ইজ এনাফ। তুমি বের হয়ে যাও,আমার মুখ তুমি কোন দিন দেখবে না। আমি ও চাই না তোমাকে দেখতে। ছিঃ তুমি এতো নোংরা!
–এতো, ছিঃ ছিঃ করার কিছু নাই। এইসব নাটকের সাথে আমাদের পরিচয় আছে।
সিগারেটের ফিল্টারে অংশটুকু জুতার অগ্রভাগ দিয়ে নিভিয়ে দ্রুত বের হয়ে গেল ইয়াদ।
তারা দ্বিকবিদিক শূন্য হয়ে,মেঝেতে ঠাস করে বসে পড়লো। একরকম সেন্স লেস ছিল। হাউমাউ করে কাঁদতে চাইছে কিন্তু চোখ দিয়ে পানি টা পর্যন্ত বের হচ্ছে না। তারা একটা ভুল মানুষের জন্য অনুভব পুষেছে,নাকি তার মা ভুল করেছে কিছু বুঝতে পারছে না। আসলে বুঝতে পারার বয়স ও না। এই বয়সে নিজের আবেগ টা ই সত্যি।