বাংলাদেশের ফুটপাথ রাজপথ অলিগলিতে যেভাবে গাড়ি ঠেলাগাড়ি ভ্যানগাড়ি বাস ট্রাক ইত্যাদি অনুমতি বিহীন অথবা বেআইনি ভাবে রাখা হয় সেসব নীতিবোধশূন্য কাজ বন্ধ করার জন্য একটি আইন সুপারিশ করা হলো।
যেখানে সেখানে যত্রতত্র চলাচলের পথ বন্ধ করে রাখার ফলে যদি কোন ব্যক্তি চলতে ফিরতে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হন, কিংবা কোন দুর্ঘটনা স্বীকার হন, কিংবা কর্মস্থানে পৌছাতে বিলম্বিত হন, অথবা ট্রেনটি ছাড়িয়া চলিয়া যায়, অথবা ডাক্তার আসিবার পূর্বে কোন রোগী মারা যায়, কিংবা মেয়েটি কবুল বলিয়া অন্যকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে ফেলে তাহলে ভুক্তভোগী নিজে কিংবা তার পক্ষ থেকে, চলাচলে বাধা সৃষ্টিকারী কতিপয় কিংবা একাধিক মালিক বা চালক কিংবা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনি মামলা করে জরিমানা চাইতে পারে। যেমন, সময় মতো পৌছাতে না পারার কারণে যদি কেউ চাকুরীর ইন্টার্ভিউতে উপস্থিত হতে না পারে তবে ব্যক্তিটি যতদিন পর্যন্ত সম পরিমাণ বেতনের একটি চাকুরী না পাবে ততদিন তার সম্ভাব্য বেতনের সমপরিমাণ অর্থদণ্ড চেয়ে আইনি মামলা করতে পারবে। নখ উল্টে যাওয়া থেকে শুরু করে স্কুল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারা। সিনেমা শুরু হওয়ার আগে পৌঁছে টিকিটের মূল্যের সঠিক ব্যবহার করতে না পারা। অথবা মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া এমন যে কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এই আইনকে ‘বিলম্বিত প্রতিরোধ আইন’ নাম দেওয়া যেতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি কিংবা পরিবারে পক্ষে থেকে যে কোন অভিভাবক কিংবা ওয়ারিশ এই মামলা করার অধিকার অর্জন করবে। অর্থদণ্ড হবে বড় শাস্তি এছাড়াও জরিমানা কিংবা গ্রেপ্তার কিংবা হাজতবাসও করা যেতে পারে।
এতে কার লাভ হবে; জনসাধারণ এবং সরকার।
কলিমুদ্দিন আহমেদ তার সুপারিশমালা স্থানীয় কমিশনারে কাছে পৌঁছে দিয়ে ভেবেছিল সায়মার অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাওয়ার প্রতিশোধ সে একদিন না একদিন নিতে পারবে। সায়মার পিতা একজন সরকারি অফিসার। তিনি তার বড় কন্যাকে গৃহ শিক্ষক কলিমুদ্দিনের কাছে বিয়ে দিতে না চাওয়াতে কলিমুদ্দিন খুব ক্ষেপে যায়। কলিমুদ্দিন ভালো করেই জানে এই সরকারী অফিসার ছাত্র অবস্থায় তার কাছে প্রাইভেট পড়া এক মেয়েকেই বিয়ে করেছিল। যে আজ সায়মার গর্ভধারিণী মা। কলিমুদ্দিন চায় নিজের জন্য ষোল আনা আর অন্যের বেলায় এক আনা এসব আর চলতে দেওয়া যায় না। এরপর একদিন যখন সে জানতে পারল সায়মার চটজলদি বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তখন সে সায়মার লেখা সমস্ত চিঠিপত্র নিয়ে দৌড়ে যায় সায়মাদের বাসার দিকে। চিঠিগুলো স্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে পারতো যে সায়মা কলিমুদ্দিনকে সজ্ঞানে বিয়ে করতে রাজি ছিল। কিন্তু ফুটপাথে একের পর এক ফেরিওয়ালা ও খরিদ্দারদের ডিঙ্গিয়ে, সি এন জি নিয়ে পৌছাতে বিলম্ব হয়ে যাওয়ায়, সায়মা অপরিচিত এক লোককে বিয়ে করার জন্য কবুল বলে ফেলে।
সুপারিশমালার তারিখ দেখে বলা যায় কলিমুদ্দিন একটি নতুন আইন পাশের জন্য তিন বছর তেত্রিশ দিন ধরে অপেক্ষা করছে। সায়মার পিতা সহ সমস্ত সরকারি কর্মচারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সে ক্ষুব্ধ হয়ে বসে আছে। তবে এখনো হতাশ হয়নি এই ভেবে যে সরকার এরকম একটি আইন প্রয়োগের ফলে প্রচুর রাজস্ব আদায় করতে পারবে এবং আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে পারবে। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে হয়তো কমিশনার ঠিক যায়গা মতো তার সুপারিশমালা ইতিমধ্যে পৌঁছে দিয়েছে।
এছাড়াও কলিমুদ্দিন প্রায় রাতে স্বপ্ন দেখে, চাঁদনী রাতে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবী পরে সে ফুটপাথ দিয়ে হাঁটছে। বাতাসে তার পাঞ্জাবী কিছুক্ষণ পরপর উড়ে যেতে চায় কিন্তু সেদিকে সে বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করে না। দেখুক লোকে তার পাঞ্জাবি বিহীন পায়জামা। কোথাও কোন ফেরিওয়ালা নেই, কোথাও কোন পার্ক করা গাড়ি নেই তাই কলিমুদ্দিনের পাশাপাশি একটি বিড়ালও লেজ নেড়ে নেড়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের স্বাদ নিতে থাকে।
স্কারবোরো, কানাডা