-0 C
Toronto
বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫

সিনেমার পোকা

সিনেমার পোকা
সিনেমার পোকা

সিনেমার পোকা বলতে যা বোঝায় আমি সেই অর্থে সিনেমাপ্রেমি নই। অলস সময়ে নেটফ্লিক্সে ঘুরতে ঘুরতে হয়তো কোন সিনেমা ক্লিক করে দু’চার মিনিট দেখি। ভাল লাগলে, মন বসলে আয়েস করে বসে যাই বিগস্ক্রিন টেলিভিশনের সামনে। সাইড টেবিলে খাবার দাবার কফি নিয়ে সোফায় কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে বসে সিনেমা দেখাই আমার পছন্দ।

আমাদের সময়ে হার্টথ্রব নায়িকা ছিলেন শ্রীদেবী। সপ্তাহ কয়েক আগে সেই শ্রীদেবী কন‍্যা জাহ্নবী কাপুরের একটা সিনেমা দেখেছিলাম নেটফ্লিক্সে। Gunjon Saxona, A cargill girl নামের সে সিনেমা ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের এক সত‍্য ঘটনা নিয়ে নির্মিত। গুণজন স‍্যাক্সোনার নাম ভুমিকায় অভিনয় করেছিলেন জাহ্নবী কাপুর। আহামরি কোন সিনেমা নয় তবে জাহ্নবী কাপুরের সুন্দর নিস্পাপ চেহারা আর অভিনয় ভাল লেগেছিল। গতকাল নেটফ্লিক্সে ঢুকে ‘MILI’  নামের এক সিনেমায় ক্লিক করেছিলাম। শুরুটা আকর্ষনীয় ছিল না তবে জাহ্নবী কাপুরের নিস্পাপ চেহারার কারনেই আটকে ছিলাম স্ক্রিনে।

- Advertisement -

মিলি নামের মেয়েটা নার্সিং নিয়ে পড়াশুনা করে। পাশাপাশি পার্টটাইম চাকুরি করে ভারতের Doon’s Kitchen নামক চেইন রেস্টুরেন্টে। সেই রেস্টুরেন্টে ছুটির সময় রাত ১২ টায় দুর্ঘটনাক্রমে আটকে পরে রেস্টুরেন্টের ডিপ ফ্রিজারে। পরবর্তী পাঁচ ছয় ঘন্টা -১৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বেঁচে থাকার প্রানান্তকর চেষ্টা এবং ক্লুবিহীন উদ্ধার অভিযানের কাহিনী নিয়েই এই সিনেমা।

আমরা যারা কানাডায় থাকি তারা শীতের দুই তিনটি মাস আসলে থাকি সিনেমার ঐ ডিপ ফ্রিজারের মতোই প্রতিকুল পরিবেশে। তবে জাহ্নবী আটকে পরেছিল সাধারণ পোশাকে আর আমরা প্রতিকুল পরিবেশে লড়াই করে যাই সকল প্রস্তুতি নিয়ে। সিনেমায় ডিপ ফ্রিজারে জাহ্নবী কাপুরের শরীরের ৮০ শতাংশ ফ্রষ্টবাইট হওয়া দেখে এই কানাডায় নিজের একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন‍্যই এ লেখা।

২০১০ সালে আমরা কানাডায় এসেছিলাম শীতের ঠিক আগে আগে। দেশে শীত আমাকে কাবু করতে পারতো না, শীতের প্রতি অবজ্ঞা তৈরি হয়েছিল সেখান থেকেই। কানাডার মরা শীতের ভয়াবহতার কথা জানতাম। তার জন‍্য প্রস্তুতি হিসেবে ভারী জ‍্যাকেট, উইন্টার বুট কিনেছিলাম এসেই কিন্তু কানটুপি এবং হ‍্যান্ডগ্লোভস পরার প্রতি অনিহা ছিল। শীত লাগলে জ‍্যাকেটের টুপি মাথায় চড়াতাম এবং খুব ঠান্ডা লাগলে জ‍্যাকেটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফেলতাম।

ডিসেম্বরের শেষের দিকেই হবে। টরন্টো জুড়ে তখন চলছিল এক্সট্রিম কোল্ড ওয়ার্নিং। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তখন গাড়ী ছিল না। গ্রোসারি করতে যেতাম দুই চাকার টানা ট্রলি নিয়ে। এপার্টমেন্ট থেকে খানিকটা দুরে প্রাইস চপার নামক এক চেইন গ্রোসারি স্টোরে।

বাজার করে আসার সময় ঘটলো বিপত্তি। হাত বাইরে থাকায় আঙ্গুলে হয়ে গেল ফ্রষ্ট বাইট। আঙ্গুল সোজা কিংবা বাঁকা করতে পারিনা। প্রচন্ড ব‍্যথা অনভূত হচ্ছিল। হাত জ‍্যাকেটের পকেটে ঢুকালে ট্রলি টানতে পারিনা। বাজার ট্রলিতে রেখে পলিথিন দিয়ে হাত মুড়িয়ে চেষ্টা করেছিলাম। লাভ হয়নি কোন। অনেক কষ্টে এপার্টমেন্টে এসে নরমাল পানিতে দুহাত ভিজিয়ে রেখেছিলাম ঘন্টাখালেক। আঙ্গুলের প্রচন্ড ব‍্যথায় কুকড়ে যাচ্ছিলাম তখন।

এরপর থেকে এ ভুল আর করিনা। কানাডার মরা শীতের সাথে অন্তত মাস্তানি চলে না।

 

গুয়েল্ফ, অন্টারিও

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles