-0.1 C
Toronto
বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫

তৃতীয় কর্ম

তৃতীয় কর্ম
আমার নামের পর লেখা হয় শিল্পী ও লেখক

আমার নামের পর লেখা হয়– শিল্পী ও লেখক। যখন বেশি লিখতাম, বছরে ঈদসংখ্যায় লেখা উপন্যাস একাধিক বেরোত, সবাই লেখক ও শিল্পী লিখত। মূলত এই দুই ধারায় গড়াগড়ি খাই। নানাজনের হাজারো বইয়ের প্রচ্ছদ করাকে, শতের ওপরে শিশু-কিশোরদের বইয়ের ছবি আঁকাকে শিল্পীর কাজই ধরা যাক। একই সঙ্গে দেশে ও বিদেশে ১৮টি একক চিত্র প্রদর্শনীকে অনেকে শিল্পীর কাজ মনে করবেন। পেশাজীবনের কথা ভেবে আমি অবাক হই। গোটা জীবনের ২০টি বছর দেশের বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘বিটপী’তে কাজ করেছি। শিল্প বিভাগের একজন সাধারণ শিল্পী থেকে জ্যেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক! শিল্প নিয়ে এই কার্যক্রম কি শিল্পীর কাজের অন্তর্ভুক্ত? হয়তো।

আমার থেকে মাত্র দুই বছর বেশি বিটপীতে ছিলেন রামেন্দুদা, মানে রামেন্দু মজুমদার। তিনি শিল্প বা সৃজনশীল বিভাগের নন। বিটপী যদি কোনো জাহাজ হয়, রেজা আলী এর মালিক হলেও, রামেন্দুদাই ছিলেন অধিনায়ক। অনেকে মনে করেন পত্রিকায় নকশা, টিভি বিজ্ঞাপন তৈরি করাই শুধু বিজ্ঞাপনী সংস্থার কাজ। এতে আবার শিল্পী হতে হয় নাকি। আমার ধারণা, শিল্পীর দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হয়।

- Advertisement -

কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে ব্যাপারটা বোঝাতে চাই। সত্তর দশকের শেষভাগে ক’বছর মাত্র যোগ দিয়েছি বিটপীতে। এসএমসি আমেরিকান ডলারপুষ্ট কোম্পানি, যারা বাংলাদেশে লাখ লাখ ডলার ওড়াবে জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য, বিজ্ঞাপন তৈরিতে বিটপীই তাদের পছন্দ। ‘মায়া বড়ির’ কিছুই এগোচ্ছে না নারী মডেলের জন্য। নামি-অনামি নাটক-সিনেমার কেউ রাজি নন মায়া বড়ির মডেল হতে। বিজ্ঞাপন দেখে যেসব সাধারণ নারী মডেল বিটপী অফিসে আসেন; রেজা আলী, রামেন্দু মজুমদার ও এসএমসির আমেরিকান প্রধানের তাদের পছন্দ হয় না।

এক দুপুরে ক্যাফে ঝিল থেকে দুপুরে খেয়ে পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ৩৫ নম্বর তোপখানা রোডের অফিসে ঢুকছি। আমার পাশ কেটে বোরকা পরা এক নারী হেঁটে গেলেন, মুখে কাপড় নেই। দেখে মুহূর্তে মুখ ভীষণ ফটোজেনিক মনে হলো। পেছন থেকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কে তুমি, কেন এসেছিলে?’ সে বলল, ‘পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে এসেছি। মায়া বড়ির বিজ্ঞাপনের মডেল হতে। আমাকে পছন্দ করেনি।’ আমি আবার তাকে নিয়ে দোতলায় উঠলাম। তখন রেজা আলী, রামেন্দুদা ও আমেরিকান এসএমসি কর্তা বসে কফি খাচ্ছেন। অভ্যর্থনার মেয়ে শিবানীর বাধা উপেক্ষা করে টোকা দিয়ে ঢুকে পড়লাম ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজা আলীর রুমে। বললাম, ‘রাস্তার পাশের স্টুডিওর তোলা কয়েকটি ছবি দেখে মেয়েটিকে বাদ দেবেন না প্লিজ।’ রামেন্দুদা রেগে উঠলেন– ‘তোমার স্পর্ধা তো কম নয়!’ দীর্ঘ কয়েক মাসে মায়া বড়ির জন্য মডেল পাচ্ছি না বলে আমেরিকান কর্তাও বেকুব হচ্ছেন তাঁর বসদের কাছে। তাই হয়তো রেজা আলী বললেন, ‘ঠিক আছে মেয়েটিকে নিয়ে যান।’ বিটপীর আলোকচিত্রী হামিদকে বলেন, বারান্দায় দাঁড় করিয়ে কয়েকটি ছবি তুলে এক্ষুনি ওয়াশ করে আমার কাছে আনো।’ এবার ছবি দেখে তারা তিনজনই বলে উঠলেন, ‘নট ব্যাড!’ পরে আমেরিকান অন্য কর্তাব্যক্তিরা ছবি দেখে বললেন, ‘একেই খুঁজছিলাম। মায়া বড়ি খাওয়া আদর্শ বাঙালি নারীমুখ।’

মায়া বড়ির টিভি বিজ্ঞাপন করেই মূলত সিনেমায় ডাক পেল মেয়েটি। ক্রমে নায়িকা হয়ে উঠল। রোজিনা।

চট্টগ্রাম থেকে আমার ছোট ভাই নোবেলকে পাঠিয়েছিল। আজও নোবেল স্বনামধন্য পুরুষমডেল।

ইমনের কথা কেন বলব না? গ্রিন রোডের কাছাকাছি থাকত ইমন। আমার সঙ্গে দেখা হলো সেন্ট্রাল রোডে। গ্রিন রোডের কোনায় স্পার্কেল ভিডিও কিংবা সোবহানবাগের মসজিদের কাছে ফিল্মফেয়ার ভিডিওতে ক্যাসেট নেওয়া-দেওয়ার সময়। ছেলেটিকে দেখেই মনে হতো ফটোজেনিক সুপার মডেল। তবে ছেলেটা ভীষণ লাজুক। মডেল হতে বিটপীতে আসতে বললাম। ছেলে লজ্জায় লাল! পরে পালাক্রমে এসেছিল কোমল পানীয় ফানটার ছোট একটা টিভি ও পত্রিকার বিজ্ঞাপনের জন্য। একটি মেয়ে মডেলসহ সারাদিন সোহরাওয়ার্দীর মাঠে কাঁধে সাইকেল নিয়ে, কখনও মেয়েটিসহ সাইকেল চালাতে হলো তাকে। শুট হলো। ভালোই কাজ দাঁড়াল। ইমনের মনে মডেলিং-টিভি-সিনেমা ঢুকে পড়ল। তারপর বেশ কিছুদিন কোনো সাড়া নেই। হঠাৎ আবার দেখা হলো স্পার্কেল ভিডিওতে। উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে উঠল, ‘ভাইয়া আপনাকে খুশির খবর দিতে খুঁজছিলাম।’ ভাবলাম, এশিয়াটিক না হয় অ্যাডকমে ভালো মডেলিংয়ের সুযোগ পেয়েছে মনে হয়। যা বলল, শুনে তো চমকে উঠলাম। বলল, ‘আমি সিনেমায় নায়কের চান্স পেয়েছি! তবে ভাইয়া, পরিচালক আমার নাম বদলে দিয়েছেন। বলেছেন সালমান শাহ।’

আমি দুষ্টুমি করে ভেংচি কেটে বললাম, ‘সালমান খান আর নাসির উদ্দিন শাহর স্যান্ডউইচ।’

কত স্মৃতি। বললাম শুধু এটুকু বোঝাতে, চোখের দেখাও তো শিল্পিত হতে পারে।

২.

দেশের মধ্যে লাইন ধরে ফেলেছিলাম লেখক-শিল্পীর। বিদেশে গেলে তো আবার জিরো।

আমার প্রথম ‘বিদেশ’, মার্কিন সিনেমা শহর লস অ্যাঞ্জেলেস। ঘোর কাটতেই লেগে যায় দুই মাস। লস অ্যাঞ্জেলেসে একটি পারিবারিক মিলনমেলা হওয়ার কথা ছিল, হলো। সেই সূত্রে কানাডা থেকে এলো শ্যালিকা, দেশ থেকে গেলাম, আমি, আমার স্ত্রী শাহানা ও চার বছরের মেয়ে অগ্নিলা। কথা ছিল দুই মাস পর শ্যালিকা কানাডা ফিরে যাবে, আমরা ঢাকা। কিন্তু তা হলো কোথায়।

প্যাসিফিক বিচের পাশে ফার্নিশড হাউসে থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। বন্ধু হয়েছিল এক উড়নচণ্ডী তরুণ। অভিনেতা খলিল সাহেবের পুত্র মুসা মোহাম্মদ। তার গাড়ি চালিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে, জীবনে প্রথম সিঙ্গেল লাইটবিহীন ফ্রি ওয়েতে ৭০-৮০ মাইল বেগে গাড়ি চালিয়েছি। ভালো লেগে গেল লস অ্যাঞ্জেলেস। দুই মাসে কি আর ফেরা যায়? শাহানা ও অগ্নিলাকে পাঠিয়ে দিয়ে বললাম, ফিরছি আমি আরও দুই মাস পর। সেই দুই মাস শেষ পর্যন্ত দুই বছরে গড়াল।

মুসার সঙ্গে থাকা, বৈধ থাকতে পাসাডিনায় ‘প্লেট আর্ট অ্যান্ড পেইন্টিং ইনস্টিটিউটে’ দেড় বছরের ‘অ্যাডভান্স পেইন্টিং কোর্সে’ ঢুকে পড়লাম। সপ্তায় দুটি ক্লাস। ভিসা স্ট্যাটাস— লিগ্যাল স্টে। তখনও কম্পিউটার গ্রাফিক্স আসেনি, সেলফোন আসেনি। রাস্তার ধারে মোড়ে ছোট-বড় গ্রাফিক্স শপ, চেয়ার-টেবিলসহ গ্রাফিক ডিজাইন করার সব যন্ত্রপাতি সাজানো থাকে। পাশে কম্পিউটার থেকে সাদাকালো ও রঙিন ছবি প্রিন্ট করে বাঁধিয়ে নেওয়া যায়। গ্রাফিক ডিজাইন করি।

সঙ্গে থাকে বাংলাদেশ সোসাইটির প্রধান জিয়া ভাই, সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু ভাই, আমার খালাতো ভাইয়ের ছেলে মুজাহীদ এবং এক বড় আমেরিকান সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী কেটি। সবার লিংকে যা গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ পেতাম, ভালোই চলে যেত। আমেরিকান ডিজাইনার যে পারিশ্রমিক নেয়, তার তিন ভাগের এক ভাগ পেতাম। তবে ক্যাশ ডলার। চলে যাচ্ছিল। চষে বেড়াই ‘এলএ’ শহর। কত দেশের কত শিল্পী, অভিনেতা, সুরস্রষ্টা ও নায়িকার সঙ্গে পরিচয় হতো। প্রায় সব ভালো রেস্তোরাঁ ও ম্যাকডোনাল্ডসে অপূর্ব সুন্দরীদের ওয়েটার হিসেবে পাওয়া যেত। এরা সবাই হলিউড সিনেমার নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এসে, স্বপ্নভঙ্গের পর জীবন চালাতে এসব করে যাচ্ছে। অন্যদিকে দেহপসারিণী হওয়ার পথেও হাতছানি ছিল বেশি। যেতও অনেকে। ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে দেহ ব্যবসা নিষিদ্ধ ছিল। ডাউনটাউনে সরু গলিতে পা দেখিয়ে গাড়িচালকদের আকৃষ্ট করে রাত যাপনে যেখানে-সেখানে যাওয়া ছিল বড় ঝুঁকির ব্যাপার। আমার চিত্রশিল্পী-বন্ধু নানা দেশে ছিল। চিত্রশিল্পী ছাড়াও অনেক ধরনের অনেক শিল্পীর সঙ্গে বন্ধুতাও হয়েছে। মনে পড়ে পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চি লম্বা কালো-সাদা মিক্সড এঞ্জেলা ইউডিক্সকে। কজন সফল উল্কি শিল্পী ছিল এঞ্জেলা। মেয়ে বন্ধু বা ছেলে বন্ধু কোনটা তাকে বলি? সুন্দর নারীর শরীর ছিল তার। অপূর্ব বক্ষধারিণী। মুশকিল হচ্ছে এই বক্ষের সঙ্গে তার পুরুষাঙ্গও ছিল।

বন্ধু হিসেবে আমাকে পছন্দ করত এঞ্জেলা। ভালোবাসত আমার শয়তানি মার্কা কিম্ভূতকিমাকার ছবিগুলো। হলিউড বুলভার্দের পাশে সানসেট বুলেভার্দে তার হোম কাম স্টুডিওতে উল্কি করার লোকের এত ভিড় যে, মাঝে দরজায় বোর্ড লাগিয়ে দিত, ‘আউট অব দ্য হোম, ক্লোজড’। কাগজে আমার আঁকা ছবি অনেক খদ্দের পছন্দ করায় এঞ্জেলা ট্যাটু করা তার কাছে শিখতে বলত আমাকে। বলত, গ্রাফিক ডিজাইন করে যা পাই তার দশ গুণ কামাই হবে। প্রথমদিকে তার সঙ্গে কাজ করব, পরে আলাদা। দেখতে সহজ লাগলেও, ইলেকট্রিক নিডল দিয়ে জীবন্ত মানুষের চামড়ায় উল্কি করা অন্তত আমার কাছে বড়ই কঠিন মনে হলো। প্রথম দুইবার আমাকে এঞ্জেলাকে যথেষ্ট শিখিয়ে দিতে হলো। খদ্দেরকে ডিসকাউন্টও দিল। পরপর দুজন ব্যথা পেয়ে চিৎকার করতে থাকলে নিডলগান আমার হাত থেকে নিয়ে এঞ্জেলা সামাল দিয়েছিল। তৃতীয়বার আমি প্রেশার ঠিক রাখতে না পেয়ে কাস্টমারের রক্ত বের করে ফেললাম। মধ্যবয়স্ক সাদা মহিলা। আচরণেও নীচ। বেচারি কষ্ট পেয়েছে। পুলিশ ডাকতে লাফালাফি করতে থাকল। অপেশাদার অনুমোদনহীন লোককে দিয়ে এঞ্জেলা কেন তার মারাত্মক ক্ষতি করল? তার হাতে নগদ ডলার ধরিয়ে এঞ্জেলা নিজে বাঁচল, আমাকেও বাঁচাল। সেই শেষ আমার তৃতীয় কোনো কর্ম, লস অ্যাঞ্জেলেসে।

৩.

এরপর তো শাহানার ইচ্ছায় আসতেই হলো কানাডার টরন্টোতে। টরন্টো ডাউনটাউনে ২৪তলা ভবনের তিনটি ফ্লোর জুড়ে ‘লিউ বার্নেট’ অ্যাড ফার্মের কানাডা অফিস। বিটপী ছিল আমেরিকান লিউ বার্নেটের সঙ্গে নীতিগতভাবে সংযুক্ত। লিউ বার্নেট-বিটপীর হয়ে ১৯৯৮ সালে মার্কিন ‘মোবিল’ কোম্পানির কাজ বাংলাদেশ পেয়েছিল, অন্যান্য বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কঠিন প্রতিযোগিতা করে। বিরাট কাজ, লাখ-লাখ টাকা বাজেট। আমি ছিলাম এই ক্যাম্পেইনের শিল্প নির্দেশক। তাদের অফিসে দেখা করতে চাইলে, এক দুপুরে ডাকল। রেফারেন্স রুম থেকে তাদের বার্ষিক গ্রন্থনা এনে দেখাল। বাংলাদেশের সেই ‘মোবিল’-বিজয়ের রিপোর্ট আছে। এজেন্সি প্রধান রেজা আলী ও শিল্প নির্দেশক হিসেবে আমার ছবিও আছে। খুশি হয়ে ভাবলাম, অন্তত কিছুদিন বিনা টাকায় ইন্টার্নশিপ যদি দেয়, প্রমাণ করতে পারব আমিও কাজ করতে পারি। তাদের শিল্প নির্দেশক বোর্ডের প্রধান আমাকে ডেকে কফি নিয়ে বসলেন আমার সঙ্গে। বোঝালেন, ‘এ দেশে এভাবে ইন্টার্নশিপ হয় না। তোমার তো এখানে বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত কোনো বিষয়ের ওপর স্নাতকোত্তরও নেই; তার ওপর বয়স পঞ্চাশোর্ধ্ব। তোমাকে কোনো সাহায্য করা অসম্ভব।’

বুঝলাম এখানে এসব হবার নয়। এরা হোয়াইট সুপ্রিমেসিতে ভোগে। নিজের জগৎ সুরক্ষিত রাখতে চায়। তা হলে আঁকা লেখা ছাড়া আমি তৃতীয় পেশা হিসেবে কী করব?

ভালো পারি গাড়ি চালাতে। আশির দশকে টু ডোর টয়োটা পাবলিকা দিয়ে আমার শুরু হয়েছিল ড্রাইভিং। প্রায় ৮০ হাজারের গাড়ি ৪০ হাজার ক্যাশ পেয়েই, স্বনামধন্য গদ্যকার– যাকে গুরুদেব বলি আমি, গাড়িটি দিয়েছিলেন। এরপর দেশে টয়োটা স্টেশন ওয়াগন চালিয়েছি। লস অ্যাঞ্জেলেসে দুই বছরে আটবার গাড়ি পাল্টিয়েছি। হাতে টাকা এলে দামি গাড়ি কিনতাম গাড়ির হাটে সানডে ময়দানে গিয়ে। হাতে টান পড়লে দামি গাড়ি, যেমন, হোন্ডা স্পোর্টস টু-ডোর সিআরএক্স বিক্রি করে পুরোনো ঝক্কড় মার্কা করোলা কিনে আনতাম। ঢাকা, লস অ্যাঞ্জেলেস কিংবা টরন্টো অথবা পৃথিবীর কোথাও আমি কোনো গাড়ি-দুর্ঘটনা ঘটাইনি।

টরন্টোয় ট্যাক্সি ড্রাইভার যদি হই, লালে লাল হয়ে যাব। এসব উবার আসার অনেক আগের ঘটনা। তখন একজন ট্যাক্সি ড্রাইভারের দুই-তিনটি বাড়ি এই কানাডায়।

শাহানা পুরান ঢাকার নামি জমিদার ঘরের মেয়ে। আবুল হাসনাত রোড তার আপন জ্যাঠার, নাবালক মিয়া লেন তার বাবার ডাকনামে। আর আবুল খয়রাত রোড তার দাদার। ছোট ভাই-বোনদের কুইব্যাকে পাঁচ-সাতটি করে বিশাল সব বাড়ি। স্বাভাবিকভাবে আমার স্ত্রীরও ইচ্ছে, নিজের বাড়িতে বাগান করবে। সবাই উৎসাহ দিল, ‘ধরে ফেলেন ট্যাক্সি! টরন্টো শহরে সবচেয়ে বেশি পিএইচডি হোল্ডার ট্যাক্সি ড্রাইভার, জানেন ভাই এটা?’

ট্যাক্সিতে উঠলেই দেখি ড্রাইভারের পেছনে পলিথিনে ঢাকা কাগজে ড্রাইভারের নাম, বাবার নাম— কী সব লেখা।

আমার মতো ‘তৃতীয় শ্রেণির’ মানুষ আসলেই কোনো ‘তৃতীয় কাজের’ নয়। বুঝলাম বেশ দেরিতে।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles