-2.8 C
Toronto
বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫

প্রতিযোগিতার দৌড়ে মার্ক কার্নি

প্রতিযোগিতার দৌড়ে মার্ক কার্নি
মার্চের নয় তারিখে আমরা জেনে যাবো লিবারেল পার্টির নেতা কে নির্বাচিত হবেন

আর বেশিদিন নেই। মার্চের নয় তারিখে আমরা জেনে যাবো লিবারেল পার্টির নেতা কে নির্বাচিত হবেন । প্রতিযোগিতার দৌড়ে মার্ক কার্নিই এগিয়ে আছেন । তাই ধরে নেওয়া যায় মার্ক কার্নি হবেন  পরবর্তী লিবারেল নেতা। জাস্টিন ট্রুডোর মেয়াদ ঘনিয়ে আসছে। ওনার জায়গায় অভিষিক্ত হবেন মার্ক কার্নি । কানাডার ইতিহাসে আর কখনো কোন অনির্বাচিত ব্যক্তি ক্ষমতার একেবারে শীর্ষ পদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এভাবে অভিষেক গ্রহণ করেনি। জাস্টিন ট্রুডো ঘরে বাইরে প্রতিবাদের মুখে সংসদ স্থগিত করে বসে আছে। তার ককাস মেম্বাররা  তার উপর প্রায় অনাস্থা নিয়ে আসলে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে সংসদ স্থগিত ছাড়া তার আর কোন গতি ছিল না। তাই নেতা হিসেবে কার্নির  অভিষেক হবে প্রথম ৯ মার্চ , তারপর ২৪ শে মার্চ আবার সংসদ এর অধিবেশন বসার কথা।

কিন্তু সমস্যা দেখা গেল কার্নি  এখনো নেতা নির্বাচিত হয়ে আসেন নি , তার আগেই তার কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট বা স্বার্থের সংঘাত নিয়ে অনেক কিছু সামনে চলে এসেছে । মিডিয়ার বোম্বশেল রিপোর্ট, মাত্র দুমাস আগে কার্নির সরাসরি স্বাক্ষরে  কানাডার অন্যতম বিনিয়োগ কোম্পানি ব্রুকফিল্ড তাদের ব্যবসা কানাডা থেকে আমেরিকায় সরিয়ে নিয়েছে। কার্নি হবেন সরকারের কেন্দ্রবিন্দু আর কিছুদিন পরেই অথচ কানাডার স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু শেয়ার হোল্ডারদের লাভ বিবেচনায় নিয়ে কোম্পানির সদর দপ্তর সরিয়ে নিয়েছে নিউ ইয়র্কে । এটা নিয়ে অনেক ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন কার্নির টীম  কিন্তু শেয়ারহোল্ডারদের  কেউ বোর্ড চেয়ার হিসেবে কার্নির  স্বাক্ষর দেয়া  সেই চিঠি ফাঁস করে দিয়েছে মিডিয়ার কাছে। বিরোধীরা বলছে কার্নি  কানাডাকে বিক্রি করে দিয়েছে , তাই কার্নি যদি জিতে যায় , কানাডা হেরে যাবে ।

- Advertisement -

কার্নি খুব ফলাও করে কৃতিত্ব নেন, পল মাটিনের সময় কানাডার অর্থনীতিকে সামাল দেয়ার। পল মাটিন ১৯৯৫ সালে বাজেট দিয়ে ৯৮ তে বাজেটে ভারসাম্য আনেন,  অথচ মার্ক কার্নি  ব্যাংক অফ কানাডায় কাজ শুরু করেন ২০০৪ সালে,  মার্টিনের সরকার বাজেট দেয়ার আরো দশ বছর পর। মার্ক কার্নির কাছে এসব অসঙ্গতির কোন সদুত্তর  নেই ।

কার্নির  কাহিনী এখানেই শেষ নয়। তিনি প্রচার করছেন, প্রথম  বিশ্বের দুটো ইকোনমিকে তিনি সামাল দিয়েছেন। কানাডা আর ইংল্যান্ড। আসলে সত্য ঘটনা হচ্ছে তিনি এ দুটো ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন এককালীন। ২০০৮-০৯ সালে কানাডার অর্থনীতি যখন মন্দার মুখে,  সে সময়টাতে তিনি ব্যাংক অফ কানাডার গভর্নর ছিলেন। বিপদের সময় যে কোন অর্থনীতি সামাল দেবার কৃতিত্ব দেওয়া হয় সেই সময়ের সরকারকে,  অর্থনীতির ঝামেলা হলে দায় ও পড়ে তাদের উপর। এক্ষেত্রে কার্নি হার্পারের শাসন আমলের কৃতিত্ব নিজের বলে চালিয়ে দেন।

ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডের গভর্নর ও ছিলেন কার্নি ২০১৩ থেকে ২০২০ পর্যন্ত। কার্নি যদি বলেন সেই সময় তিনি ইংল্যান্ডের অর্থনৈতিক সামাল দিয়েছেন, তবে তা হবে ব্রিটিশদের কাছে নিউজ । কারণ ঠিক সেই সময়টাতেই ইংল্যান্ডের অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি বেসামাল হয়ে পড়ে ।

ব্রিটিশরা কার্নির নাম দেন মার্ক কারনেজ ।  সে সময় বরিস জনসন এর পরে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন লিজ ট্রাস। তিনি বলেন, মার্ক কার্নির কারণেই বৃটেনের অর্থনীতিতে সে যে ধ্বস নেমেছে, সেটা ইংল্যান্ড এখনো কাটিয়ে উঠতে পারে নি।  মানি প্রিন্টিং বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত মুদ্রা ছাপানোর জন্য  অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয় , আর অন্যদিকে  ক্লাইমেট চেঞ্জ এর নামে নেট জিরো  পলিসি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ইংল্যান্ডের জ্বালানি শিল্প একেবারে মুখ থুবড়ে পড়ে । সব মিলিয়ে ইংল্যান্ডের অর্থনীতির বারোটা বেজে যায় , একদিকে উৎপাদন নেই , নেট জিরোর নামে গ্রীন এনার্জি নিয়ে কার্নির অবসেশন একেবারে গোয়ার্তুমির পর্যায়ে চলে যায় , তার পরিণতিতে কলকারখানা বন্ধ হয়ে যায় একের পর এক  , অন্যদিকে চাকুরীর বাজারে অস্থিরতা । সব মিলিয়ে  ইংল্যান্ড এর অর্থনীতি এরকম খারাপ অবস্থায় আগে কখনো পড়ে নি।   কানাডার মানুষের উচিত, মার্ক কার্নিকে নিয়ে আরো ভালোভাবে জানা , জাস্টিন ট্রুডোর যেমন রাষ্ট্রের আয় ব্যয় এর হিসাব নাই , মার্ক কার্নির ও তাই। লাগামহীন মুদ্রার সরবরাহ , মুদ্রাস্ফীতি , নেট জিরোর নামে উদপাদন খাতকে পঙ্গু করে দেয়া  এগুলো মার্ক কার্নির ইকোনমিক পলিসির হলমার্ক।  মার্ক কার্নিই তো সেদিন পর্যন্ত ট্রুডো লিবারেল এর অর্থ উপদেষ্টা ছিলেন অথচ এখন ট্রুডোর ব্যর্থতা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে বলছেন , গত দশ বছরে ইকোনমি কে ঠিকমতো ম্যানেজ করা হয় নি।

লিজ ট্রাস কে কানাডার সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি সতর্ক করেন ,  মার্ক কার্নিকে কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করলে  কানাডার জনগণকে ইংল্যান্ড এর ধ্বংসাত্মক অর্থনীতির মতো পরিণতি বইতে হতে পারে ।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles