-0.1 C
Toronto
বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫

সুন্দর ধুয়ে পানি খাবো?

সুন্দর ধুয়ে পানি খাবো?
নতুন বউ দেখার জন্য আশেপাশের কয়েকজন মহিলা এসে ভিড় করেছে রাহিদের বাড়ির সামনে

নতুন বউ দেখার জন্য আশেপাশের কয়েকজন মহিলা এসে ভিড় করেছে রাহিদের বাড়ির সামনে।

সম্পর্কে রাহির চাচি রাহির মা কে ডেকে বললো-

- Advertisement -

-আমাদের রাহি না কি শহরের নায়িকার মতো মেয়ে বিয়া করে আনছে।

রাহির মা মুখ ঝামটা দিয়ে বললো –

-হুম,সুন্দর।  সুন্দর ধুয়ে পানি খাবো? বলে গেছি ভাত চড়াইতে চুলা ধরাইতে পারে না। চাউল ধুয়ার পানি খুঁজে পায় না।

-বউ রে ডাক দেও দেখি।

-আমার হাউশ রং লাগে নাই। এতো হাউশ থাকলে ঘরে গিয়া পরাণ ভরে বউ দেখো।

রাহির চাচি বউ দেখে বললো-

-এই বউ তো বিশ্বস সুন্দরী। এমন সুন্দর মেয়ে স্বপ্নে ও দেখি নাই।

রাহির চাচির কথা শুনে তারা লজ্জা পেলো। এই বাড়িতে আসার পরে এই প্রথম তারার ভালো একটা অনুভূতিতে মন টা ভরে গেছে। তারার রিবন্ডিং করা সিল্কি চুল গুলো ধরে দেখছে কয়েকজন। একজন তো অবাক চোখে  জিজ্ঞেস করলো-

-এই গুলা কি আসল চুল?

তারা ছোট্ট করে উত্তর দিল –

-জ্বি

তেরো কি চৌদ্দ বছরের একটা মেয়ে অবাক হয় বললো-

-বাপরে এগুলো সত্যিকারের চুল!

রাহি রান্না ঘরে গেলো সকালের খাবারের জন্য।  গিয়ে দেখলো রাগে ফোঁসফোঁস করছে,মা।

-তোর কি বিয়া এখন-ই করার লাগতো? বউ খাওয়াবি কি? এই যে গ্রামে চলে আইলি দুই টাকা কামাই হয়। তোর বাপ কি একা সংসার টানতে পারে? কোন দির ঢাকা যাবি চলে যা।

-আম্মা নতুন বউ কয়েক টা দিন বাড়িতে থাকি।  তাছাড়া তারা শহরের খুব বড়লোক ঘরের মেয়ে। এমন মেয়ে আমার বউ হয়েছে এটা আমার জন্য অনেক বড় বিষয়।

-হুম বড়লোকের আমড়া। এমন বড়লোকনদিয়া করবো কি?

ভাত টা পর্যন্ত রানতে পারে নাই।

-কিছু দিন সহ্য করো আম্মা। দেখবা ওর মা-বাবা আমাদের মেনে নিলে ঢাকায় থাকা খাওয়া নিয়ে আমার আর কোন চিন্তা থাকবে না।

যে টাকা রোজকার করি সব তোমার হাতে দিতে পারবো।

-ঠিক আছে। এক সপ্তাহ পরে ঢাকা চলে যাবি কিন্তু। আর শোন বউ কে বলবি বেটা সেজে না থাকার জন্য।

-আম্মা কি রানছো?

-গরম ভাত,গরুর দুধ দিয়ে খেয়ে নে এই বেলা।

রাহি তারার জন্য প্লেটে করে ভাত নিয়ে গেলো। তার ভাত দেখে নাক মুখ কুঁচকে বললো-

-সকালে আমি ভাত খাই না। তাও আবার দুধ ভাত।

-গ্রামের নিয় যখন যা তখন তাই খেতে হবে।

-আমি খাবো না।

-সকালে তুমি কি খাও?

-মা স্যুপের বাটিতে এক বাটি পাতলা খিচুড়ি আর ডিম সিদ্ধ দিত। কখনো একটা রুটি একটা ডিম পোঁচ আর কফি। আমি এসব খাবো না

– এখন এইসব সম্ভব না। এডজাস্ট করো।

-এখানে আমি কোন ভাবেই এডজাস্ট করতে পারবো না।

আমি বাড়ি যাবো।

-বাড়ি যাবে মানে! তুমি আমার বউ তাছাড়া তোমার মা খুব কষ্ট পাবে।

-আমি ভুল করেছি রাহি, আমি বিরাট ভুল করেছি। আমার ইচ্ছে মরে যেতে ইচ্ছে করছে।

-এইসব বলে লাভ হবে না। প্যান্ট পরে থেকো না। ড্রেস চেঞ্জ করো।

-জিন্স প্লাজু আর টপস ছাড়া আমার কাছে আর কোন ড্রেস নেই।

রাহি মায়ের একটা শাড়ি বের করে দিয়ে বললো –

-এটা পরো।

-আমি  শাড়ি পরতে পারি না। তাছাড়া ব্লাউজ,ছায়া কোথায় পাবো। সবচেয়ে বড় কথা এই শাড়ি পরা পসিবল না। এটার মধ্যে গোবরের গন্ধ পাচ্ছি।

-তুমি অনেকক্ষণ ধরে ঘাউড়ামি করছো তারা। এখন করছো বেয়াদবি।  এই শাড়ি টা আমার মায়ের। গোবরের গন্ধ যদি আসে ও আমার জন্য মায়ের শাড়ি মানে অমূল্য সম্পদ।

-তোমার সম্পদ নিয়ে তুমি  থাকো। আমি এখানে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছি না,খেতে পারছি না তাছাড়া ওয়াশ রুমে এখন পর্যন্ত যাই নি।

আমার ওয়াশ রুমে যাওয়া প্রয়োজন, ব্যাবস্থা করে দাও।

-দৌলত ভাইদের বাড়ির ওয়াশ রুম ভালো আছে, এখন নিয়ে যাচ্ছি বাট পার্বতীতে মানিয়ে নিতে হবে। তোমার জন্য ডিমের সেদ্ধর ব্যাবস্তা করছি।

কিছুক্ষণ পরে রাহি একটা বাটিতে করে কালি মাখা একটা ডিম নিয়ে আসলো। তারা অবাক হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো-

-ডিম এমন কেন?

-এটা ডিম পুড়া। আলু পুড়ার মতো আমরা ডিম ও পুড়ে খাই।

তারা কালি মাখা ডিম টা কোন রকম অভিযোগ ছাড়াই হাতে নিয়ে ছিলতে গিয়ে দেখলো বিকট গন্ধ।

-ছিঃ এটা কি খাওয়ার উপযোগী? আমি এটা খেতে পারবো না।

-একদম চুপ করো। এটা খেতে পারবো না,সেটা করতে পারবো না। নিজের বাসাটা কে ও নরক ভাবতে এখন আমার বাড়ি টা কে নরক বানিয়ে ফেলেছো।

রাহির কথা শুনে তারার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। বালিশে মুখ ঢেকে কান্না লুকাতে গিয়ে শুনতে পাচ্ছে রাহির মায়ের চিৎকার। স্পষ্ট-ই কথা শুনতে পারছে তারা-

-মুরগী ডা এগারোটা ডিম পারছে। কয়েক দিনের মধ্যে তা দেয়া শুরু করতো। জমিদারের ঝি বিয়া করে আনছে। কি এমন মহাভারত আমার উল্টায় ফেলছে। তোর বড়লোক তোর কাছে। এখানে বসে বসে অন্ন ধ্বংস করতাছে। ওই রায়হান তুই কবে ঢাকা যাবি যা। কামাই রোজকার কর,গলায় তো নিজের ঢোল নিজেই ঝুলাইছস। মা-বাবা যে আছে তার দাম তো দিলি না।

——–

সন্ধ্যার দিকে পারুল লুচি বানিয়ে তেলে ছাড়তে ছাড়তে তরু কে বললো-

-তুমি আর মন খারাপ করে থেকো না তো। মেয়ের খোঁজ পেয়ে গেছো চিন্তার কিছু নেই। মেয়ে যা ভালো মনেকরেছে তা নিজের সিদ্ধান্তে করেছে।

-কিন্তু ভাবি,তারা এখনো অনেক ছোট।

তরুর কথা শুনে হ্যাল্পিংহ্যান্ড ফরিদা মুখ মুচড়ে বললো-

-হুম ছোট্ট, কামতো করছে বড়।

পারুল ফরিদা কে থামিয়ে দিয়ে বললো-

-কিছু মনেকরো না তরু। লোকে আসলে এমনই বলে। তারা এতো ছোট ও না।

-কি বলছো ভাবি,তারার কি বিয়ের বয়স হয়েছে?

-বিয়ের বয়স হয়নি কিন্তু বিয়ে তো পাকনামী করে করে ফেলেছে। এখন মজা বুঝতে দাও। তুমি কোন যোগাযোগ করবা না। এসে পায়ে ধরুক,বলুক মা আমার ভুল হয়েছে। আমি তোমাদের সম্মান নষ্ট করেছি,আমাকে মাফ করো।

-ভাবি আমি বাসায় চলে যাবো। আমি তাদের কথা আর নিতে পারছি না।

-তরু মন খারাপ করো না। দুধ চা দিয়ে লুচি টা ভিজিয়ে খাও আর আবির কে নিয়ে ভাবো। তোমাদের একটা সন্তান প্রয়োজন।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles