12.3 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০, ২০২৫

মানুষের নজরের আড়ালে

মানুষের নজরের আড়ালে - the Bengali Times
সৈয়দ আব্দুল হাদির গোলাপী এখন ট্রেনে ছবিতে গাওয়া একটি গানের লাইন সব সময় মাথায় ঘোরে জানি জানি সবই জানি মনে মনে রাখি না জানি কখন জানি উড়াল দেয় সে পাখী

যাদেরকে মানুষ বেশী ভালোবাসে তাদেরকে সম্ভবত একটু দুরে সরিয়ে রাখে, মানুষের নজরের আড়ালে। সৈয়দ আব্দুল হাদির ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ছবিতে গাওয়া একটি গানের লাইন সব সময় মাথায় ঘোরে-“জানি জানি সবই জানি মনে মনে রাখি, না জানি কখন জানি উড়াল দেয় সে পাখী”!

নালো বয়সে আমার থেকে কিছুটা বড় হলেও আমরা ছিলাম বন্ধুর মত। সে আমাকে আপনি বলতো, আমি বলতাম তুই। বাংলাদেশে থাকা অবস্হায় এবং প্রবাসের এই দীর্ঘ জীবনে যখনই দৌলতদিয়া ঘাট পার হয়েছি কিংবা পরিচিত কোন আত্মীয় স্বজন বন্ধু বা ভিআইপি পার হতে গিয়ে আমাকে স্মরণ করেছেন, তখনই যাকে ফোন করতাম, সে হলো আমার ভাগ্নে নালো। শুধু বলতাম, নালো ঘাটে থাকিস, আমি বা অমুক পার হবে। বলার সাথে সাথে কখনো একা, কখনো লোকজন নিয়ে ফেরীর টিকিট কাউন্টারে গিয়ে অপেক্ষা করতো। বাসা থেকে বের হতে আমার দেরী হতো, নালোর দেরী হতো না।

- Advertisement -

বার বার কল আসতো, মামা কখন আসবেন, আমি টার্মিনালে আছি। একেবারে ফেরীতে গাড়ি উঠিয়ে দিয়ে তারপর ফিরবে। কখনো কখনো নদী পার হয়ে ফেরীতে করে আরিচা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসতো। নদীর তাজা মাছ লাগবে, নালোকে বললেই হয়ে যেত। ঘাটে নৌকা ঠিক করে রাখতে হবে, কুশাহাটা বেতকা যাব, সব আয়োজন নালো করে রাখতো। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের প্রথম দিকে চাচার বাড়ীর বাইরে ট্রেন্স খনন করে আমরা সেখানে পালিয়ে থাকতাম। পাকিস্তানি বোমারু বিমান আকাশে গর্জন শুনলেই আমি আর নালো দৌড়ে ট্রেন্সে আশ্রয় নিতাম, অনেকটা খেলার ছলে।

ঐ স্বল্পকালীন সময়ে নদীতে মাছ ধরা, গোসল করা, নৌকায় ভ্রমণ সবকিছুতেই নালো। যখন রাজনীতি করতাম, নালো ছিল দৌলতদিয়া হকার সমিতির সভাপতি। এক ডাকেই শ’খানেক লোক নিয়ে হাজির হয়ে যেত। এবার দেশে থাকা অবস্হায় আমার ছোটভাই হেনার মৃতদেহের গোসল করানো থেকে সৎকারে সব কিছুর সাথেই নালো। চরের গ্রামে একটা ঘর তৈরী করবো, সেটার ভরসাও নালোর উপর করেছিলাম। আমার বড় চাচার বড় মেয়ের ছেলে নালো ছিল আমাদের পরিবারের অনেক আদরের।

মানুষের নজরের আড়ালে - the Bengali Times

কখনো বলা হয় নি, মামা তোমাকে অনেক ভালোবাসি। দেশ থেকে এবার কানাডায় ফিরে আসার সময়ও দেখা করতে এলো একটা জমি কেনাবেচার বিষয়ে জরুরী আলাপ করতে। আজ সেই নালো একেবারেই আকস্মিকভাবে আমাদের ছেড়ে চলে গেল। নালোর ছোট ভাইয়ের ছেলে সাগরের মাধ‍্যমে টরন্টো বসেই জানাজার মোনাজাতে শরীক হলাম। সবাই আমার ভাগ্নে ও বন্ধু নালোর জন‍্যে দোয়া করবেন। মহান আল্লাহ যেন তাকে বেহশত নসীব করেন।

এরপর দেশে গেলে কাকে বলবো, নালো, ঘাটে থাকিস, আসতেছি! নালো, কোথায় হারিয়ে গেলি হুট করে, মামা!

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles