
সেনসেটিভ বিষয় তবুও বিষয়টিতে আমার একটা পর্যবেক্ষণ দিতে ইচ্ছে হলো। শাহবাগ বনাম শাপলা। বিষয়টা আসলে সেরকম ছিলই না। শুরুতে শুধুই শাহবাগ ছিল। তখন শাপলা ছিল না। শাহবাগে ধীরে ধীরে অনেকেই যেতে শুরু করলো। সরকার বিরোধী একটা বড় ছাত্র সংগঠনেরও যাওয়া উচিত বলে অনেকেই তখন মত প্রকাশ করেছিলো। তারাও যাবে কি যাবে না দোটানায় ছিল। ইতিমধ্যে শাহবাগ ছিনতাই হয়ে গেল উগ্র নাস্তিক্যবাদী ও ইসলাম বিদ্বেষীদের হাতে। একজন নামকরা টিভি অভিনেতা ‘বন্দে মাতররম’ আবৃত্তি করলেন সেখানে সম্ভবত এরকম একটি লাইন ছিল, “মোহাম্মদ ইউনুসের মত করে বল, বন্দে মাতররম”! তারপর সেখানে কিছু ব্লগার খুন হলো, নানা রকম ষড়যন্ত্র শুরু হলো।
শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরী করে আন্দোলন শুরু হয় ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখে আর তারও তিন মাস পর হেফাজতে ইসলাম চট্টগ্রাম সহ সারা দেশ থেকে লং মার্চ করে ঢাকায় আসে ৫ই মে ২০১৩ সালে। এই যে তিনটি মাস আপনি যদি রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ করেন তাহলে দেখবেন যারা ফেব্রুয়ারি বা মার্চে শাহবাগে ছিল তাদের অনেকেই এপ্রিল মে মাসে আর ছিলেন না। তিন চার মাস সেখানে যে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মনোস্তাত্বিক পালা বদল ঘটেছে, ঘটানো হয়েছে তা গবেষকদের ভবিষ্যৎ গবেষণার উপর ছেড়ে দিলাম। কাজেই এপ্রিল মে মাসে সেখানে যা যা ঘটেছে তাতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হেফাজতের লং মার্চ অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। কেননা যখনই বাংলাদেশে অরাজনৈতিক কোন আন্দোলন গড়ে উঠে সেটাকে রাজনৈতিক কুক্ষিগত করে ফায়দা নেবার প্রচন্ড প্রয়াস শুরু হয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাত্তারের সময় সেই প্রাইমারী শিক্ষকদের আন্দোলন থেকে শুরু করে শাহবাগের গণআন্দোলন, ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং ২০১৮ ও ২০২৪ এর কোটা সংস্কার আন্দোলন সবকিছুতেই ছিল তাদের টানাটানির প্রচেষ্টা। তবে সফলতার সংগে ২০২৪ এর জুলাই আগস্ট অভ্যুত্থানের নেতারা তাদের আন্দোলনকে রাজনীতিবিদদের হাত থেকে দুরে রাখতে যথেষ্ট মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়ে সফলতা পেয়েছে। ইদানিং কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন আপনি শাহবাগ নাকি শাপলা? মাঝামাঝি নাকি কিছু নেই! আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশের সেই থিওরী “হয় তুমি আমার পক্ষে, না হলে আমার বিপক্ষে” এ জাতীয় ফর্মুলা পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় মানুষ সেদিন যেমন প্রত্যাখান করেছিল তেমনী “শাহবাগ নাকি শাপলা” এ ধরনের বিদ্বেষমুলক বিভাজনের চেষ্টাও দেশের বেশীরভাগ মানুষ পছন্দ করবে না।
স্কারবোরো, কানাডা