16.9 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৫

সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ‘রশি দিয়ে বাঁধায়’ পুলিশকে তামান্নার হঙ্কার

সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ‘রশি দিয়ে বাঁধায়’ পুলিশকে তামান্নার হঙ্কার - the Bengali Times

শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ও তার স্ত্রী শারমীন আক্তার তামান্না

চট্টগ্রামে শীর্ষ সন্ত্রাসীর তকমা পাওয়া ছোট সাজ্জাদ যেমন, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে তার স্ত্রী তামান্না শারমিনও তেমনই। বরং স্বামীর চেয়ে স্ত্রী আরও এক ধাপ এগিয়ে। চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, বায়েজিদ বোস্তামি, খুলশি ও চান্দগাঁও এলাকার ত্রাস ও শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ওরফে ছোট সাজ্জাদ।

রাউজান এবং রাঙ্গুনিয়া এলাকায়ও তার আতঙ্কে তটস্থ সাধারণ মানুষ। সাজ্জাদ ফেসবুক লাইভে এসে ‘ওসিকে ন্যাংটা করে পিটুনির’ হুমকি দেয়। আর তাকে গ্রেফতারের পর তার স্ত্রী তামান্না শারমিন ফেসবুক লাইভে এসে ‘কাঁড়ি কাঁড়ি-বান্ডিল বান্ডিল টাকা দিয়ে স্বামীকে জামিন করানো হবে’ বলে জানান। স্বামী-স্ত্রী দুজনের এমন হুঙ্কারের বিষয়টি চট্টগ্রামে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

- Advertisement -

ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করে আবারও পুলিশের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনের স্ত্রী শারমীন আক্তার তামান্না। অস্ত্র উদ্ধারের জন্য সাজ্জাদের কোমরে রশি বেঁধে গতকাল সোমবার বায়েজিদ বোস্তামি এবং আগের দিন রাউজানে অভিযানে গিয়ে মাইকিং করায় পুলিশ মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ এনে আদালতে মামলা করারও হুমকি দেন আলোচিত এই নারী।

তবে এই ভিডিও নিয়ে সিএমপির একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে কল করলেও কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। যদিও কিছুদিন আগে তামান্নাকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছিলেন সিএমপির উপকমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলাম।

ভিডিওতে তামান্না বলেন, ‘আমার স্বামীকে কোরবানির গরুর মতো রশি দিয়ে বেঁধে রাস্তায় ঘোরানো মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং অপমানজনক। এতকিছু না করে আমার স্বামীকে গুলি করে মেরে ফেললে তো হয়।’ মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফেসবুকে দেওয়া একটি ভিডিও বার্তায় এসব বলেন তিনি।

গত ১৫ মার্চ ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিং মল থেকে সাজ্জাদকে পুলিশ ধরেনি বলে দাবি করে তামান্না বলেন, সেদিন সূচি নামের এক নারী সাজ্জাদকে ধরে পুলিশে খবর দেন। গত ২৯ জানুয়ারি সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেন নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ।

সাজ্জাদ বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফেসবুক লাইভে এসে পেটানোর হুমকি দিয়েছিলেন। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করতে গেলে পুলিশের ওপর গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান তিনি। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্রসহ ১৬টি মামলা রয়েছে।

সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারের পর ৩০ মার্চ নগরের বাকলিয়া এক্সেস রোডে একটি প্রাইভেটকারে ‘ব্রাশফায়ার’ করে তার অনুসারীরা দুজনকে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতদের মধ্যে বখতিয়ার হোসেনের মা ফিরোজা বেগম গত মঙ্গলবার বাকলিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় সাজ্জাদ, তার স্ত্রী তামান্নাসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। অন্য পাঁচ আসামি হলেন মো. হাছান, মোবারক হোসেন, মো. খোরশেদ, মো. রায়হান ও মো. বোরহান।

এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন মানিক, বেলাল ও সজিব। এর মধ্যে সজিব জোড়া খুনের দায় স্বীকার করে সোমবার দুপুরে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশ জানায়, সাজ্জাদ চান্দগাঁও থানার তাহসীন হত্যা মামলা ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ডে আছেন। জোড়া খুনের মামলায় মানিক ও বেলাল চারদিনের রিমান্ডে আছেন।

রিমান্ডে থাকা সাজ্জাদকে নিয়ে ৬ এপ্রিল রাতে জেলার রাউজান উপজেলার কদলপুর এবং ৭ এপ্রিল নগরের অক্সিজেন এলাকায় সচেতনতামূলক মাইকিং করে পুলিশ। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, চান্দগাঁও থানা পুলিশ এবং বিশেষায়িত ইউনিট কাউন্টার টেররিজমের সোয়াট সদস্যরা সাজ্জাদকে ঘিরে হাঁটছেন। হাতকড়া পরা ‘ছোট সাজ্জাদের’ গায়ে ভেস্ট ও মাথায় হেলমেট।

এ সময় পুলিশের একজন হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা দিচ্ছেন, ‘সন্ত্রাসী ও ত্রাস ছোট সাজ্জাদকে সিএমপি কমিশনার স্যারের নির্দেশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাষ্ট্রের কাছে কোনো সন্ত্রাসীর জায়গা হবে না। আপনাদের এলাকায় যদি কোনো সন্ত্রাসী নাড়াচাড়া দিয়ে ওঠে, তাহলে ছোট সাজ্জাদের মতো তাদের পরিণতি হবে।’

হাতকড়া হাতে আসামিকে নিয়ে পুলিশের সচেতনতামূলক মাইকিংয়ের ঘটনায় নগরবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। রিমান্ডে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে মাইকে ঘোষণা দিয়ে তার সহযোগীদের ধরা কিংবা অস্ত্র উদ্ধার বা অস্ত্র ভাণ্ডারের সন্ধান করা হাস্যকর বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

সাজ্জাদকে হাতকড়া পড়িয়ে এবং কোমরে রশি বেঁধে এলাকায় ঘোরানোর ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর তামান্না সোমবার ফেসবুক পোস্টে পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ঘোষণা দেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে দেওয়া ১ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ভিডিওবার্তায় তামান্না বলেন, ‘কোনো জায়গায় কি নজির আছে একজন রিমান্ডের আসামিকে গরুর মতো রশি বেঁধে এলাকায় এলাকায় মাইকিং করার? জিরো টলারেন্স ঘোষণা করতেছে ওসি আরিফ। আমার স্বামী কি কোরবানের গরু? আমার স্বামীকে এভাবে নিয়ে মাইকিং করতেছে!’

মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে অভিযোগ করে তামান্না বলেন, ‘আসলে ওর (সাজ্জাদ) ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড নাই, ওর জন্য কথা বলার কেউ নাই তো; আমিও মেয়ে মানুষ— দুই তিনটা মামলা দিয়ে বসে আছে। এখন আমি আপনাদের ওপর ছেড়ে দিছি। আপনাদের কি মনে হয়, এটা কি মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে না? আমার স্বামীকে এভাবে গরুর রশি দিয়ে বেঁধে এলাকায় এলাকায় নিয়ে গিয়ে অপমান করা হচ্ছে, কেন? আমি আপনাদের কাছে এই প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম।’

ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী যদি অপরাধী হয় তার বিচার আদালত করবে। ওসি আরিফ আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে নাই। আমার স্বামীকে সূচি গ্রেপ্তার করিয়েছে— এটা আমি বারবার বলেছি। বসুন্ধরা সিটিতে আমরা ঘুরতে গেছি, ওই অবস্থায় সূচি আমার স্বামীকে দেখে সিকিউরিটি রুমে নেওয়ার তিন ঘণ্টা পর পুলিশ আমাকে ও আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে। আমি পরে ছুটে আসি।’

‘আমার স্বামী যখন তামান্না তামান্না বলে চিৎকার করছিল, তখন আমার মোবাইল হারিয়ে যাওয়ায় পাঁচ মিনিটের জন্য নিচে নামছিলাম। একসাথেই গ্রেপ্তার হয়েছি। ওসি আরিফ বা সিএমপির কমিশনার আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে নাই। কিন্তু ওরা সিম্পেথি (সহানুভূতি) নেওয়ার জন্য আমার স্বামীকে রাস্তায় নামিয়ে… আমার স্বামীকে গুলি করে মারতে পারতেছে না?’ বলেন তিনি।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles