
বিস্ফোরক শেখ হাসিনা। ‘আত্মকেন্দ্রিক সুদখোর’ বলে আক্রমণ করলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূসকে। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ক্ষমতার লোভে বিদেশি শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশের পতনের ষড়যন্ত্র করেছেন ইউনূস। জুলাই বিপ্লবে নিহত আবু সায়েদের মৃত্যু নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন হাসিনা।
রবিবার ভিডিয়ো বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন যে আল্লাহ নিশ্চয়ই কোনও কারণে তাঁকে জীবিত রেখেছেন। শীঘ্রই বাংলাদেশে ফিরবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি। ইউনূস সরকারকে আক্রমণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত চিহ্ন মুছে দেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হচ্ছে। তাদের স্মৃতি জীবিত রাখতেই প্রতিটি জেলায় মুক্তি যুদ্ধ কমপ্লেক্স তৈরি করেছিলাম আমরা, কিন্তু সেগুলি ভেঙে গুঁড়িয়ে, জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইউনূস এগুলির জবাব দিতে পারবেন? আপনি যদি আগুন নিয়ে খেলেন, তবে আপনাকেও পুড়তে হবে।”
বিদেশি শক্তি বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চাইছে, এই দাবি করে হাসিনা বলেন, “সুদখোর, ক্ষমতালোভী, অর্থলোভী, আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তি বিদেশি ষড়যন্ত্র করেছেন এবং দেশকে ধ্বংস করতে টাকা নিচ্ছেন। বিএনপি ও জামাত-ই-ইসলামি খুন করছে, আওয়ামি লীগের সদস্যদের হেনস্থা করছে।”
শেখ হাসিনা আক্ষেপের সুরে বলেন যে আওয়ামি লীগ সরকারের পতন বাংলাদেশের শিল্পক্ষেত্রে বড় ধাক্কা দিয়েছে। হাজার হাজার কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আওয়ামি লীগের কর্মী-সমর্থকদের কারখানা জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শিল্প ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। হোটেল, হাসপাতাল-সবকিছু নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, “বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুর জন্য আওয়ামি লীগের কর্মীদের ফাঁসানো হচ্ছে। যারা থানা জ্বালিয়েছে, পুলিশকে মেরেছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। আওয়ামি লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে। আমাদের নেতাদের বাড়িতেও থাকতে দেওয়া হচ্ছে না।”
ইউনূস প্রশাসনকে দুষে হাসিনা বলেন, “যদি আইন রক্ষাকারীদেরই জনসমক্ষে খুন করা হয়, তাহলে দেশ কীভাবে চলবে? ইউনূস কি এটা বুঝতে পারছেন না? নাকি তিনি দেশকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন? ফ্যাসিস্ট জঙ্গি ইউনূস ক্ষমতার লোভে আমাদের দেশকে ধবংস করছে।”
গত বছরের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত আবু সইদের মৃত্যু নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। শুরু থেকেই পুলিশ ও বিক্ষোভকারীরা ভিন্ন দাবি করেছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম রিপোর্টে জানায় যে পুলিশের গুলিতেই মৃত্য়ু হয়েছে সইদের। ৭.৬২ এমএমের বুলেট ব্যবহারের উল্লেখ ছিল রিপোর্টে। শেখ হাসিনা দাবি করেন যে পুলিশ ওই আন্দোলনে শুধু রবার পেলেট ব্যবহার করেছিল, বুলেট ব্যবহার করেনি।
হাসিনা বলেন, “আবু সইদের রবার বুলেট লেগেছিল। পুলিশ বুলেট ব্যবহার করেনি। যখন ওরা পুলিশকে লক্ষ্য় করে পাথর ছুড়ছিল, তখন আবু সইদের মাথা থেঁতলে গিয়েছিল পাথরে। পুলিশেরও আত্মরক্ষা করার অধিকার রয়েছে। তাহলে ৭.৬২এমএমের বুলেট এল কোথা থেকে? আন্দোলনে কে রাইফেল আনে? যখন একজন পুলিশ কর্তা বুলেট টি দেখেছিলেন এবং কে এই ধরনের বন্দুক এনেছিল, তা খুঁজে বের করার কথা বলেছিলেন, তখন ইউনূস তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। ও এটা করেছে কারণ ও-ই খুনের জন্য দায়ী। আমি জুলাই বিপ্লবের এই ঘটনা নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম, কিন্তু ইউনূস কাজ করতে দেননি।”