
উইক ডেইজে জন্মদিনে নিজের হাতে করা দারুণ এক লাঞ্চট্রিট পেলাম প্রিয় সুমিতা ও অনুপমের কাছে,তাদের বাসায়। দৃশ্যত কাচ্চিবিরানী মত হলেও আসলে মাংসে ভরা তেহারী,অপূর্ব কালাভূনা,চাপলী কাবাব,মুরগীর রানরোস্ট ও স্বাদে টইটুম্বুর পায়েস। ফিনিশিং টাপাল দানাদার খোলা পাতার ঘনজ্বাল দেয়া চা। আহা,আমি খাদক নই তবু আজ হলাম।
জন্মদিনে কেন যেন যা হওয়ার কথা নয় তাই হয়ে যায় প্রায়। ভালোই হয়,হয়তো সৌভাগ্য বশত । এই সৌভাগ্যেটা কেমন একটু বলি। টরন্টো আসার গোড়ার দিকে, যখন মেয়ের বিয়ে হয়নি তখন নিজের জন্মদিন সন্ধ্যার পর অগ্নিলার পছন্দের কোনো রেস্টুরেন্টে স্ত্রী শাহানা সহ তিনজন ডিনার করতাম। এটাই ছিলো জন্মদিনের আনন্দ। একবার ঘটে গেলো অন্য ঘটনা! শহিদুল ইসলাম মিন্টু ও নিয়াজ শাহিদী বল্লেন আমরাও এবার সঙ্গে খাবো এবং জায়গাটি আমরাই ঠিক করবো।
কি করে না করি দুইজনই প্রিয়জন। সন্ধ্যার পর আমরা তিনজন এসে দাড়ালাম ডেনফোর্থে এক রেস্টুরেন্টে যার পেছনে লাগোয়া বিরাট পার্টি হল রয়েছে। দরজা ঠেলে ঢুকতে আঁৎকে উঠলাম ! দাঁড়িয়ে আছে বিশ-ত্রিশজন সবাই টরন্টোর আমার পরিচিত বন্ধুজনেরা,প্রিয়জনেরা। একসাথে উচ্চস্বরে বলে উঠলেন – হ্যাপী বার্থডে টু ইউ! এরকম আয়োজন নিজের জন্মদিনে স্বপ্নে ও ভাবিনি কখনো। শুধুমাত্র ভালোবাসার টানে,আন্তরিকতার টানে শহিদুল ইসলাম মিন্টু ও নিয়াজ শাহিদী আমার জন্যে এই বড় আয়োজনটি করেছেন।
আনন্দে কানায় কানায় ভরে উঠে ছিলো মন। ২০১২র পর যখন ঢাকায় দুই-তিন মাস থেকে ছবির প্রদর্শনীর আঁকার কাজ করতে বাসা ভাড়া করে ভূতের গলিতে স্টুডিও থাকার ব্যবস্থা করেছিলাম। একাই থাকতাম দিন রাত বেঙ্গল গ্যালারীতে একক প্রদর্শনীর জন্যে ছবি আঁকতাম। জন্মদিন এলে ভাবতাম ঢাকায় কেকি করবে আমার মত অর্ধ মানুষের আবার জন্মদিন! তবে কি ভাবে যেন একের পর এক কত কিছু ঘটে যায়। ঢাকায় থাকলে একটা ব্যাপার অবধারিত ছিলো শুধু সকাল ঠিক নয়টায় বৈশাখী টিভি চ্যানেলে সুন্দরী উপস্থাপিকার সামনে নিজের কথা জন্মের কথা কাজের কথা লাইভে বলতে বসা।
এটি ছিলো বৈশাখী টিভির কর্মকর্তা কবি পলাশ মাহবুবের আমাকে জন্মদিনের গিফট। হন্তদন্ত হয়ে সকাল নয়টার আগে পৌঁছাতে হতো মহাখালী পার হয়ে ডানে মোড় নিয়ে কিছুটা গুলশান একের দিকে এগুলে বৈশাখীর স্টুডিও। খুব টেনশান হতো সময়মত না পৌঁছালে পলাশ খুব ঝামেলায় পড়বে। ভালোয় ভালোয় শেষ হলে ভাবতাম সোজা বাসায় গিয়ে ঢুকবো তারপর বেরুবো ঠিক সন্ধ্যার পর রাতের জন্মদিনের ডিনারে মুনতাসীর মামুনের বাড়িতে ফাতেমা ভাবী বলে রেখেছেন,যাবো সেখানেমাঝের সময়টা একটানা ছবি আঁকবো। খালি গায়ে শুয়ে আছি ভূতের গলির বাসা কাম স্টুডিওতে হঠাৎ দরজায় টোকা। খুলে দেখি শিল্পীবন্ধু তাজউদ্দিন হাজির। এক হাতে জন্মদিনের কেক অন্য হাতে পলিথিনের পোটলায় বক্সে প্লাস্টিক কোটায় কাচ্চি বিরানী, মুরগীর রোস্ট বিফভূনা,পানির বোতলে বোরহানী।
চিৎ হয়ে শুয়ে বুকের মাঝে কেকটি রেখে কাটলাম। দুপুরের দুইজন মিলে খাদ্য সব শেষ করে তাজউদ্দিন তাজউদ্দিন পুরোনো ঢাকায় শ্বশুর বাড়ি চলে গেলো। আমি ডুবে গেলাম সামনে ইজেলে রাখা ক্যানভাসে রং লেপনে। সন্ধ্যা পেরুতে চারতলা থেকে নেমে ধানমুন্ডি ১৪/এ যেতে রিক্সায় উঠে বসতেই কল এলো- বন্ধু কই আছো আসো চলে এসো অফিসে আমার। তোমার জন্যে টেবিলে কেক আর সাথে অপেক্ষা করছেন গুরু স্থপতি শামসুল ওয়ারেশ,শিল্পী ভাষ্কর আবদুল্লাহ খালিদ,ভাষ্কর মুজিব আরো ক’জন। বুঝলাম যাওয়ার পথে ধানমুন্ডি ছয়ে হচ্ছে বদরুল হায়দার বাদলের অফিস। ও
য়ারেশ ভাই খালিদ ভাই এসেছেন যখন ঘন্টা খানেক থামতেই হবে। দেড় ঘন্টা পার করে বুঝিয়ে সুজিয়ে বের হয়ে প্রায় এসে পড়েছি ১৪/এ ঠিক তখন ফোন এলো চ্যানেল আই কর্মকর্তা ছড়াকার প্রিয়জন আমীরুল ইসলামের –শুভ জন্মদিন ইকবাল ভাই,দেরী কইরেন না সোজা চলে আসেন আমার তাজমহল রোড মহাম্মদপুর ফ্ল্যাটে। কেক রেডি খাওয়া রেডি চ্যানেল আইয়ের সুন্দর মানুষেরা হাজির আপনার জন্মদিনে সাপ্রইজ পার্টি আমি আয়োজন করেছি। সব শুনে স্যার আসছেন অন দ্য ওয়ে,ওনেকদিন নাকি দেখা হয়না আপনার সঙ্গে! স্যার মানে আমার প্রিয় সয়ীদ ভাই,আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।উপায় নেই না যাওয়ার। বাধ্য হয়ে ১৪/এ তিন তলায় উঠে ফাতেমা ভাীকে সব বুঝিয়ে বল্লাম। ফাতেমা ভাবী হচ্ছেন জীবন্ত দৃশ্যমান ফেরেস্তার মত মানুষ। সব শুনে তিনি বল্লেন – যান সেখানেই যান সায়ীদ ভাই যখন আসছেন। আমি আজকের সব খাওয়া ফ্রিজে তুলে রাখতে বলবো।কাল এসে খেয়ে যাবেন।
আরেকবার ২০২৩শে মনে হয়। অনুপম ও সেই সময় তার ডকোমেন্টারী ফিল্মের কাজে ঢাকায় ছিলো। অনুপমকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছি ধানমুন্ডি ২৭ ছুইয়েছে যেখানে সাত মসজিদ রোডকে সেইখানে স্থপতি শামসুল ওয়ারেশ ভাইয়ের অফিসে। চমৎকার ঘন্টা দুইয়েক কথা বল্লেন তিনি অনুপম শুট করলো। ওয়ারেশ ভাইয়ের অফিস থেকে বেরুতে বন্ধু আফজাল হোসেন ও সানাউল আরেফিন সানার এ্যাড এজেন্সী ‘মাত্রা’ ঠিক রাস্তার অপর দিকে। ভাবলাম দেখা করে যাই। লারিভ বিল্ডিং এর তিন তলায় উঠে শুনি কিছুক্ষণ হয় আফজাল গেছে আগামী ঈদে তার ‘ছোটকাকু’র শুটিং করতে।
সানাও আমার দীর্ঘ যুগের বন্ধু। সানার রুমে বসে মাত্র গরম কফিতে চুমুক দিয়েছি আর হন্তদন্ত ভাবে তাদের মিডিয়ার রিতু ম্যাডাম এসে বল্লো – শুভ জন্মদিন স্যার! সকালে ফেসবুকে দেখলাম। সানা চেয়ার ছেড়ে উঠে বাইরে গেলো আবার ফিরে এসে ঘন্টা খানেক আড্ডায় মগ্ন রাখলো আমাকে। আবার এলো রিতু এবার বল্লো – সানা স্যার, হল রুমে সব রেডি।
আমাকে নিয়ে সানা তার রুম থেকে বেরিয়ে হলরুমে গিয়ে হতবাক। অফিসের সবাই জড়ো হয়েছে। টেবিলে অরেঞ্জ রঙে কেকে মোম ও জ্বলছে। গিফট সাজানো। ঢুকতেই সবাই একসাথে বলে উঠলো-শুভ জন্মদিন-হ্যাপী বার্থডে। সানাকে আলিঙ্গন ছাড়া আর কিবা করতে পারি আমি। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আচমকা জন্মদিনে আর দীর্ঘ আড্ডায় কিছুটা ক্লান্ত। ফিরতে হয় ঢাকায় যেখানে উঠেছি গুলশান দুই চক্করের কাছেই তরুণ বন্ধু কিশওয়ার ইমদাদের বাসায়। সানার গাড়ি নামিয়ে দিয়ে গেলো। পার্কিং পেরিয়ে লিফটে তিনতলায় দরজা খোলার আগেই শুনি অনেক লোকের বিশষকরে নারীকন্ঠে কলরব।
আবার অবাক কিশওয়ার,শিল্পী প্রীতি আলী,শিল্পী আন্দালিব প্রীমা সহ লোকে ঠাঁসা ঘর । বড় স্বাস্থবান কেক বসে আছে টেবিলে।কেটারিং সরবরাহ খাদ্য সাজানো আরেক দিকে রেড ওয়াইন ও পর্যাপ্ত। তবু প্রীতি আলী তার আনা লার্জ সাইজ স্যাম্পেইনের ছিপি খুলে ফেনা তুলতে সম্মিলিত কন্ঠে চিৎকার – হ্যাপী বার্থডে সৈয়দ ইকবাল। সত্যি সাপ্রাইজ! এমন ভালোবাসা এতো আন্তরিকতা আমাকে মানায় কিনা ভাবার সময় টুকু পাওয়া যায়না! এজন্যেই সৌভাগ্য শব্দটি কতটা শক্তিময় বলে ছিলাম শুরুতে। মাননীয় পলকমন্ত্রী কথাই ধার করি-আমিতো কিছু করিনি! এমনি,এমনি সব হয়ে যায়! হোক,বেচে থাকলে ভবিষতে ও হোক।
স্কারবোরো, কানাডা