
শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারির জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয়েছে। রেড নোটিশ জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে পৃথক তিনটি ধাপে আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। শনিবার পুলিশ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় মুখে দৃঢ় ঘোষণা ছিল—‘পালাবো না।’ কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতেই সেই কথার কোনো মূল্য রাখেননি ওবায়দুল কাদের। নিজে নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে গেলেও, ফ্যাসিস্ট হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলের অনেক নেতাকর্মীকে ফেলে রেখে গেছেন চরম বিপদের মুখে।
গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো শেখ হাসিনা সরকারের একাধিক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে তিনটি ধাপে আবেদন করেছে। আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, সংশ্লিষ্ট মামলার বিবরণ এবং অভিযুক্তদের অবস্থানের সম্ভাব্য তথ্য ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে ইন্টারপোল যদি আবেদনটি বৈধ মনে করে, তবে তাদের ১৯৫টি সদস্য রাষ্ট্রে রেড নোটিশ পাঠানো হবে।
রেড নোটিশ মূলত একটি আন্তর্জাতিক ‘ওয়ান্টেড’ তালিকা, যেখানে উল্লেখ করা হয় – কোন ব্যক্তি অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত, তার পরিচয়, অপরাধের ধরন, এবং সম্ভাব্য অবস্থান। সদস্য রাষ্ট্রগুলো তখন ঐ ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ওবায়দুল কাদের বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার রাজারহাট নিউটাউনের একটি অভিজাত আবাসনে স্ত্রীসহ অবস্থান করছেন। তাঁর সম্ভাব্য অবস্থান হিসেবে ডিএলএফ নিউটাউন হাইটস প্লাজার কথা বলা হচ্ছে।
তবে রেড নোটিশ জারি হলে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। ইন্টারপোল সদস্য দেশ হিসেবে ভারত বাধ্যতামূলকভাবে এই নোটিশ অনুসরণ না করলেও রাজনৈতিক চাপ ও আন্তর্জাতিক নজরদারির কারণে অনেক সময় সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
ওবায়দুল কাদের একসময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “পালাবো না, প্রয়োজনে ফখরুল সাহেবের বাসায় গিয়ে উঠবো, না দিলে ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়ি তো আছেই।” এই বক্তব্য এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক বাস্তবতায় পালানোর প্রশ্ন যতই ব্যঙ্গাত্মক হোক, বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটি হয়ে দাঁড়িয়েছে বাস্তব শঙ্কার প্রতিচ্ছবি।
বাংলাদেশে ক্ষমতা বদলের পর পালিয়ে থাকা নেতাদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির প্রক্রিয়া দেশীয় রাজনীতিতে এক নতুন দিক উন্মোচন করেছে। এতে প্রমাণিত হচ্ছে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়—আর রাজনীতি থেকে বিচ্যুতি মানেই দায়মুক্তি নয়।