14.2 C
Toronto
সোমবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৫

ছিনতাইয়ের শিকার শিক্ষিকার কণ্ঠে গা শিউরানো গল্প

ছিনতাইয়ের শিকার শিক্ষিকার কণ্ঠে গা শিউরানো গল্প - the Bengali Times
প্রথম ছবিতে ফুটপাতে ট্রলি ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে ফারহানা আক্তার জাহান দ্বিতীয় ছবিতে তাঁর সামনে সাদা রঙের প্রাইভেট কারটি আসার একদুই সেকেন্ডের মধ্যে গাড়িটির ভেতর থেকে একজন ভ্যানিটি ব্যাগ টান দেন তৃতীয় ছবিতে হাতের ব্যাগ টান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বাঁ থেকে ছবিগুলো ভিডিও থেকে

ভোরের শান্ত শহর তখনো পুরো জেগে ওঠেনি। ঠিক সেই সময়, রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর গ্রিনল্যান্ড টাওয়ারের সামনের ফুটপাতে একা দাঁড়িয়ে ছিলেন কলেজের এক প্রভাষক ফারহানা আক্তার জাহান। হাতে ট্রলি ব্যাগ, হৃদয়ে ছিল গন্তব্যে পৌঁছানোর তাড়না। হঠাৎ করেই ছুটে এল একটি সাদা প্রাইভেটকার। মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে গেল দৃশ্যপট—ব্যাগ ধরে টান মারল ছিনতাইকারীরা।

ব্যাগের ফিতা হাতে প্যাঁচানো থাকায় ছিটকে পড়লেন সড়কে। একপ্রকার গায়ের জোরে প্রায় ১৫ গজ টেনে নিয়ে গেল তাঁকে দ্রুতগতির গাড়িটি। ভাগ্যিস, মাঝপথে ফিতা খুলে যায়! নইলে হয়তো আর কোনো দিন পরিবারের কাছে ফেরা হতো না।

- Advertisement -

ফারহানা আক্তার জাহান গাজীপুরের চন্দ্রার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের প্রভাষক। দুই কন্যা আর স্বামী মোস্তফা সারোয়ারকে নিয়ে তাঁর ছোট্ট সংসার। শনিবারের সেই ভয়াবহ ভোরের কথা মনে করে এখনো শিউরে ওঠেন তিনি। রোববার রাতে আবেগভরা কণ্ঠে বললেন, ‘মরতে পারতাম। আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। তাঁর কাছে লাখো শুকরিয়া। চাই, এই শহর যেন সবার জন্য নিরাপদ হয়।’

গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বারই বাড়ির মেয়ে ফারহানা। প্রায় দুই দশক ধরে শিক্ষকতার মাধ্যমে আলোকিত করে চলেছেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। শনিবার গাজীপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি জরুরি প্রশিক্ষণে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন তিনি। দায়িত্ববোধের কাছে নিজের ব্যথা-কষ্টকেও তুচ্ছ মনে করে সেদিন আর বাসায় ফেরেননি। রক্তাক্ত শরীর নিয়েই সোজা গাজীপুর চলে যান এবং সেখানে থেকেই চিকিৎসা নেন।

তিনি বলেন, ‘বাসার সামনেই ঘটনা। আমার দুই মেয়ে বাসায় ছিল। ছোট মেয়েকে কিছু জানাইনি। ও কেঁদে ভেঙে পড়ত। বড় মেয়েকে ডেকে একটি পুরোনো ফোন নিয়ে রওনা হই।’

এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হতেই স্বজন-শিক্ষার্থী সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তবে সাহসী এই শিক্ষক এখনো দৃঢ়। বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা করেছেন। হাত, পেট ছড়িয়ে গেছে, কিন্তু বড় কোনো আঘাত লাগেনি। এ জন্য কৃতজ্ঞ। আবারও দাঁড়াব, আবারও ক্লাসে ফিরব।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মো. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ভিডিও বিশ্লেষণ ও তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে।

ফারহানা আক্তার জাহান বর্তমানে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁর প্রত্যাশা, শহরটা যেন সত্যিকার অর্থেই নিরাপদ হয়ে ওঠে; আর কোনো নারীকে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে এমন বিভীষিকাময় মুহূর্তের শিকার হতে না হয়।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles