
ফেসবুকে পরিচয় ও প্রেম। চার বছর আগে মোবাইল ফোনে সৌদি আরব প্রবাসী নিরবের সঙ্গে বিয়ে। সম্প্রতি দেশে ফিরে স্ত্রী রিয়াকে প্রথমবার নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু স্ত্রী এতে রাজি হননি। কাজীর মাধ্যমে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ করেন। বাবার চাপে রিয়াকে পাঠানো হয় স্বামীর বাড়িতে। সেখানে দ্বিতীয়বার তাদের বিয়ে হয়। পরে স্বামীর বাড়িতেই পাওয়া যায় রিয়ার মরদেহ।
রিয়া (১৯) নামের ওই কলেজছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছে তার স্বামীর পরিবারের সদস্যরা। তবে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেছেন রিয়ার মা নাসিমা বেগম।
আজ সোমবার বিকেলে রাজবাড়ীর কালুখালী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে রিয়া হত্যার বিচার চেয়েছেন তার মা।
গার্মেন্টসকর্মী নাসিমা বেগম বলেন, স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর গার্মেন্টসে চাকরি শুরু করেন তিনি। সেই চাকরি করে রিয়াকে বড় করেন। রিয়া কালুখালীর মৃগী শহীদ দিয়ানত ডিগ্রি কলেজে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্রধরে ৪ বছর পূর্বে টাঙ্গাইলের সখিপুর থানার কালিদাস ঠকানীপাড়া গ্রামের বাবুলের ছেলে সৌদি প্রবাসী নিরবের (২৩) সঙ্গে মোবাইল ফোনে বিয়ে হয়। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে ৫ মাস সংসার করেন। সেখানে শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। এরপর থেকে রিয়া তার মায়ের বাড়ি কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের বিকয়া গ্রামে বসবাস করেন।
সাম্প্রতি রিয়ার স্বামী নিরব সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন। তিনি গত বৃহস্পতিবার কলেজে গিয়ে রিয়ার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং জোর করে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য হুমকি দেন। পরে রিয়ার সঙ্গে তার মামাবাড়িতে যান নিরব। তখন অভিভাবক নিয়ে আসতে নিবরকে বলেন ওই বাড়ির লোকজন। অভিভাবক নিয়ে আসতে অপারগতা প্রকাশ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিয়াকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন নিরব।
ওই ঘটনার পর রিয়া পাংশা উপজেলার মাছপাড়ার শিহড় গ্রামের তার খালা রোজিনার বাড়িতে যান। সেখানে থেকে গত ২২ এপ্রিল সকালে কাজীর মাধ্যমে নিরবের কাছে বিচ্ছেদপত্র পাঠান রিয়া।
একই দিন রিয়ার বাবা আমিরুল ইসলাম পাংশা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরে রিয়ার খালার বাড়িতে গিয়ে হুমকি-ধামকি দেন পাংশা থানার এসআই শাওন। পুলিশ সদস্যের হুমকির পর রিয়াকে নিয়ে থানায় যান তার খালা। থানায় রিয়ার বাবা আমিরুল ইসলাম এবং তার চাচা-চাচি উপস্থিতি ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে রিয়াকে তার সিদ্ধান্ত অমান্য করে নিরব ও তার পরিবারের হাতে তুলে দেয় পুলিশ। সেখান থেকে ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানার চরপাড়া গ্রামের বাড়িতে নিয়ে রাতে আবার রিয়াকে বিয়ে করেন নিরব।
ওই ঘটনার পরের দিন রিয়া ফোনে তার মা নাসিমা বেগমকে বলেন, ‘আমাকে বাঁচাও, আমাকে মেরে ফেলবে।’
নাসিমা বেগম বলেন, ‘গত শুক্রবার বিকেলে ফোন জানতে পারি, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু ওরা পরিকল্পিতভাবে আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। পরে মেয়ের মরদেহ কালুখালীর বিকয়া গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করা হয়েছে। আমি সখিপুর থানায় মামলা করতে চাইলে রিয়ার বাবা একটি অপমৃত্যু মামলা করেছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার দাবি করছি।’
রিয়ার খালা রোজিনা পারভীন বলেন, ‘পাংশা থানার এসআই শাওন ও রিয়ার বাবা, চাচা-চাচি ও নিরব আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। রিয়া যেতে না চাইলেও তাকে জোরপূর্বক পাঠায়। আমি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যার বিচার দাবি করছি।’
এ বিষয়ে পাংশা থানার এসআই শাওন বলেন, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রিয়াকে উদ্ধার করে তার বাবার জিম্মায় দ েওয়া হয়েছে। কোনো খারাপ আচরণ বা জোরপূর্বক দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।