
২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে একজন এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি ফের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তার এবারের অপরাধটি ছিল আরো ভয়ঙ্কর। তিনি কমবয়সী এক কুমারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক জড়িয়ে পড়েন- কোনোরকম সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা না করেই তারা সহবাস করেন এবং মেয়েটি জানত না যে ওই ব্যক্তি একজন এইডস রোগী।
ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটর আদ্রে ওঙ জানান, ওই ব্যক্তি ১৪ বছর বয়সী মেয়েটিকে তার বাড়িতে ১৭ বার ডেকে নেয় এবং সপ্তাহে অন্তত দুবার তারা অরক্ষিত যৌনতায় লিপ্ত হতো। অবশ্য আদালত নিশ্চিত হয়েছে- মেয়েটি এখনো এইচআইভি পজিটিভ হয়নি।
সিঙ্গাপুরের বাসিন্দা ৪১ বছর বয়সী লোকটিকে সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) ১১টি অভিযোগের দোষী সাব্যস্ত করে ১৩ বছর দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যার মধ্যে নাবালিকার সঙ্গে যৌনাচার ও সংক্রামক রোগ আইনের অধীনে অপরাধ ছিল। সাজা ঘোষণার সময় আরো ২৫টি অভিযোগ বিবেচনা করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের জুলাই মাসে লোকটির এইচআইভি সংক্রমণ ধরা পড়ে। তাকে বলা হয়েছিল, সম্ভাব্য সেক্স পার্টনারদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের আগে তার অবস্থা সম্পর্কে জানাতে হবে। তাকে নিরাপদ যৌনচর্চার বিষয়েও পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। পরে তাকে একটি দোকানে চুরি করার অপরাধে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে মুক্তি মেলে তার।
ওই ব্যক্তি চিকিৎসা নিচ্ছেন। ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই যখন তাকে শেষবার পরীক্ষা হয়, তখন তার ভাইরাল লোড ‘শনাক্তযোগ্য নয়’ বলে প্রমাণিত হয়েছিল। আদালতের মামলার সাথে সম্পর্কিত নয় এমন একটি বিবৃতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মাসের শুরুতে বলেছিল ”এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিরা যারা চিকিৎসাধীন এবং ‘শনাক্ত করা যায় না এমন ভাইরাল লোড রয়েছে’ তাদের যৌনসঙ্গীদের ভাইরাস সংক্রমণের কার্যত কোনো ঝুঁকি নেই।”
লোকটি ২০১৯ সালের জুলাই মাসে তার কর্মক্ষেত্রে ওই নাবালিকার সঙ্গে প্রথম দেখা করে। পরের মাসে তারা হোয়াটসঅ্যাপে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ শুরু করে। সে সময় ওই ব্যক্তির দীর্ঘদিনের বান্ধবী ছিল এবং সে ওই নারীর সঙ্গে থাকত। কিন্তু সে মেয়েটিকে বলেছিল, সে অবিবাহিত এবং তার মায়ের সাথে থাকে।
২০১৯ সালের জুলাই মাসে ওই নাবালিকা তার বান্ধবী হতে রাজি হয়। পরের মাসে সে ওই ব্যক্তির বাড়িতে যায় এবং লোকটি তার সঙ্গে অরক্ষিত যৌনচারে লিপ্ত এবং তার কুমারীত্ব কেড়ে নেয়। এরপরই তারা সেখানেই একাধিকবার যৌনতায় লিপ্ত হয়। লোকটি ওই নাবালিকাকে এইচআইভি সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে জানায়নি। এমনকি যৌনমিলনের আগে সেই ঝুঁকি ওই নাবালিকা নিতে ইচ্ছুক কিনা- সে ব্যাপারেও স্বেচ্ছায় চুক্তি করেনি। আদালত শুনেছে, এটি এই কারণে যে তিনি তাকে হারানোর ভয় পেয়েছিলেন এবং মেয়েটি তার সম্পর্কে কি ভাববেন তা নিয়ে ভীত ছিলেন।
ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটর আদ্রে ওঙ বলেন, যখন ভুক্তভোগী অভিযুক্তকে বলেছিল যে তার বয়স ১৪ বছর, অভিযুক্ত উত্তর দিয়েছিল- প্রেমে ক্ষেত্রে বয়স কোনো ব্যাপার না। অভিযুক্ত ভিকটিমকে আরো বলেছিল, সে তাকে ১০ বছরের মধ্যে বিয়ে করতে চায় এবং সে তার কাছ থেকে একটি সন্তান চায়। অভিযুক্ত আরো বলেছে যে একজন ব্যক্তি যে তার সাথে একবার যৌনমিলন করেছে এবং দ্বিতীয়বার তার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে অস্বীকার করেছে সে একজন ‘অবিশ্বস্ত পুরুষ’। একজন পুরুষ যদি ঘন ঘন তার সাথে যৌন সম্পর্ক করতে চায়, তার মানে হলো যে লোকটি তাকে খুব ভালোবাসে। অপরাধী মেয়েটিকে আরো বলেছিল, সে ‘তাকে খুব ভালোবাসে’ এবং সে কারণেই সে প্রায়শই তার সাথে যৌন সম্পর্ক করত।
২০১৯ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে তার অপরাধ প্রকাশ্যে আসে যখন মেয়েটির ভাই তার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে এবং তার বোন লোকটির সঙ্গে যে বার্তাগুলো বিনিময় করেছিল তা দেখে। ভাই তাদের বাবাকে সতর্ক করেন। তিনি ওই বছরের ২ ডিসেম্বর পুলিশে রিপোর্ট করেন।
উল্লেখ্য, সংক্রামক রোগ আইনের অধীনে প্রতিটি অভিযোগের জন্য লোকটিকে ১০ বছর পর্যন্ত জেল এবং ৫০ হাজার ডলার জরিমানা করা যেতে পারে।