
যখন প্রাইমারী স্কুলে পড়তাম তখন স্কুলে যাবার একটা আনন্দ ছিল টিফিন পিরিয়ডে এক আনার ঝালমুড়ি বা দুই পয়সার মটকা বা টানা কিনে খাওয়া। দুই আনায় অনেকগুলো বাদাম পাওয়া যেত। মটকা বা চানাচুর বিক্রেতাদের নাম আজ আর মনে নেই! ক্লাস ফাইভ পাস করে হাইস্কুলে গেলাম। গোয়ালন্দ নাজির উদ্দিন হাইস্কুলে গিয়ে পেলাম একজন নারী উদ্যোক্তা যিনি স্কুলের সামনে মুড়ির মোয়া, নাড়ু ইত্যাদি বিক্রি করতেন। বাইরের খাবারে ধুলা বালি থাকে, পেট খারাপ করবে বলে বাসা থেকে সব সময়ই নিরুৎসাহিত করা হত। তবুও মাঝে মাঝে খেতাম। কে যেন আমসত্য, পাঁপড় বিক্রি করতেন, লিখতে গিয়ে মনে পড়লো, আমসত্যটা আমার খুব প্রিয় ছিল।
অষ্টম শ্রেনী থেকে ফরিদপুর জিলা স্কুলে চলে যাওয়াতে মোয়ালির মোয়া বা নাড়ু খুব বেশী খাওয়া হয় নি। কিন্তু তাতে কি! কেমন যেন একটা সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। স্কুলের শিক্ষক, ছাত্র ছাত্রী, দফতরী, বেল পিটানো দারোয়ানের মতই মোয়ালীও স্কুলের একটা অংশ হয়ে গিয়েছিল। তারপর যখন নির্বাচন করি তখনো সেই অধিকারে ভোট চাইতে গিয়েছিলাম যতদুর মনে পড়ে। সেসব বহু বছরের পুরনো কথা।
নুতন স্মৃতি হলো, কয়েকদিন আগে বসে ছিলাম গোয়ালন্দের বাসার নীচ তলায়। হঠাৎ মোয়ালী এলেন। শরীরটা অনেক দুর্বল মনে হলো, চোখেও ঠিকমত দেখছেন কিনা বুঝা গেল না! বললাম কার কাছে এসেছো? হেনার কাছে?
দীর্ঘদিন আমি দেশে থাকি না। অনেকেই এখন আমার ছোটভাই হেনার খোঁজে আসেন, আমাদের বাড়ীটাও কেউ কেউ হেনা সাহেবের বাসা বললে বুঝতে পারেন। তো আমি একটু পরীক্ষা করার জন্যেই বললাম, হেনার কাছেই এসেছে কিনা! কিংবা আমাকে হয়তো এতদিন পরে চিনতে পারবে না। হয়তো জানেও না যে আমি দেশে এসেছি!
অবাক করে দিয়ে মোয়ালি বললেন, না, আমি হালিমের কাছে এসেছি! তুমি হালিম না?
কিছুটা অবাক হলাম! পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে দিলাম। সন্তুষ্ট হলেন কিনা বুঝা গেল না!
আমি যখন প্লেনের মধ্যে টরন্টো ফিরে যাচ্ছি অথবা দশ ঘন্টার লম্বা ট্রানজিটে দোহায় বসে পরবর্তী ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছি তখনই দুঃসংবাদটি পেলাম। মোয়ালি আর নেই!
মোয়ালির জন্যে অনেক ছেলে মেয়ে, সাবেক ছাত্র ছাত্রীই কিছু না কিছু স্মৃতিচারণ করছেন যা অনেকের ভাগ্যেই জোটে না। আমি শুধু ভাবছি সেদিন আরো কিছু বেশী সাহায্য কেন করলাম না!
আমি মোয়ালির আত্মার শান্তি কামনা করি, পরিবার ও স্বজনদের জানাই গভীর শোক ও সমবেদনা।
স্কারবোরো, কানাডা